বল্লাল সেন বাংলাভূমিকে পাল ও বৌদ্ধ শাসন থেকে মুক্ত করে সনাতনী আধিপত্য বিস্তার করে, কৌলিন্য প্রথা সৃষ্টির মাধ্যমে সামাজিক সংস্কারের অগ্রদূত হিসাবে ইতিহাসে উজ্জল হয়ে আছেন।
প্রায় ১৯ বছর খ্যাতির সঙ্গে রাজ্য শাসন করেছিলেন। তিনি শুধু ন্যায়পরায়ণ শাসক ছিলেন না, লেখক ও পন্ডিত্য সহ বহুবিধ গুণে গুণান্বিত ছিলেন। পাল এবং বৌদ্ধ শাসন থেকে মুক্ত করে তিনি বাংলাতে সনাতন ধর্ম পুনঃ সংস্থাপন করেন।
বল্লাল সেন কে ছিলেন
কুলজি গ্রন্থগুলোর মাধ্যমে জানা যায়, সেন রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা বিজয় সেনের পুত্র এবং উত্তরসূরি বিখ্যাত এই রাজা। ১০৬০ সনে লৌহিত্য (ব্রহ্মপুত্র) নদের তীরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন বিজয়সেন। তিনি বিয়ে করেন গৌড়াধিপতি চন্দ্রসেনের কন্যাকে।
শিবের বরে তার জন্ম হওয়ায় কারণে, বিজয়সেন পুত্রের নামকরণ করেছিলেন “বরলাল” নামে। এই “বরলাল” নাম পরবর্তীতে “বল্লাল” শব্দে পরিণত হয়। মাত্র চৌদ্দ বছর বয়সেই বরলাল অস্ত্র ও শাস্ত্রবিদ্যায় দক্ষ হয়ে উঠেন। জ্ঞান ও বিদ্যার প্রতি এই রাজার যথেষ্ট অনুরাগ ছিল। এজন্যই শিলালিপির প্রশস্তিকায় তাঁকে “বিদ্বানমন্ডলীয় চক্রবর্তী ” উল্লেখ করে প্রশংসা করা হয়েছে।
বঙ্গভূমির এই রাজা বল্লাল সেন বিয়ে করেছিলেন পশ্চিম চালুক্য সাম্রাজ্যের রাজকুমারী রামদেবীকে। রাজার বৈবাহিক এই সম্পর্ক, দক্ষিণ ভারতের শাসকদের সঙ্গে বাংলার সেন শাসকদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের বার্তা বহন করে।
বেশকিছু গ্রন্থ অনুযায়ী তিনি পিতার মতো শিবের উপাসক ছিলেন। তাঁর সম্পর্কিত গ্রন্থগুলো থেকে কিছু ঐতিহাসিকদের মত, তিনি ওষধিনাথ নামের এক দাক্ষিণাত্য ব্রাহ্মণবংশ জাত ছিলেন। এজন্যই “দ্বিজরাজ ওষধি নাথ বংশজ” বলে সন্মোধন করা হয়ে থাকে সেন রাজাদের।
তিনি কয়েকটি রাজকীয় উপাধি গ্রহণ করেছিলেন, এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল “অরিরাজ নিঃশঙ্ক শঙ্কর” ও “সার্বভৌম সম্রাট” উপাধি। তিনি বাংলার সেন রাজবংশের দ্বিতীয় শাষক ছিলেন। তাঁর শাসনামল ছিল ১১৬০ থেকে ১১৭৯ সাল পর্যন্ত। বাংলাভূমিতে সামাজিক সংস্কারের জন্য তিনি সুপরিচিত হয়ে আছেন।
বল্লাল সেনের ইতিহাস
বাংলাভূমিতে সেন রাজবংশের দ্বিতীয় রাজা ছিলেন বল্লাল সেন। তিনি ১১৬০ থেকে ১১৭৯ সন পর্যন্ত সেন বংশের রাজত্ব পরিচালনা করেছিলেন।
এর কিছু সময় আগে বাংলার সিংহাসনে ছিলেন তাঁর পিতা বিজয় সেন। উল্লেখ্য, সেন বংশের শাসনামলের পূর্বে বাংলাভূমি তিনশ বছরের বেশি সময় ধরে বৌদ্ধধর্মের পৃষ্ঠপোষক পাল রাজাদের শাসনে ছিল। খ্রিষ্টীয় দশম শতকে পাল শক্তির পতনের মাধ্যমে বৌদ্ধধর্মের ওপর আঘাত আসে।
পাল রাজাদের শাসনামলে বৌদ্ধধর্মে দীক্ষিত বাংলাভূমিতে পরবর্তী সময়ে ব্রাহ্মণ্যধর্ম ও সনাতনী সংস্কৃতির আধিপত্য বিস্তারে সেন রাজাদের ভূমিকা অপরিসীম।
মধ্যযুগের ব্রাহ্মণ্য গ্রন্থের কঠোর নিয়মগুলোর কিছু সংস্কার করে অনেকটাই সহনীয় করা হয়। এই সময়ে বাংলা ভূমিতে আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষাব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয়, যেটা আমাদের মধ্যে পরিচিত “টোল” নামে।
বাংলা ভূমিতে এভাবেই সেন বংশের শাসনামলে বল্লাল সেনের পৃষ্ঠপোষকতায় এগারো ও বারো শতকে সংস্কৃত উচ্চশিক্ষা ব্যাপক প্রাধান্য লাভ করেছিল।
বল্লাল সেনের কৌলিন্য প্রথা
সম্মান লাভের জন্য রাজ্যের প্রজাগণ সৎপথে চলবে, এজন্যই তিনি কৌলিন্য প্রথা প্রবর্তন করেছিলেন। নবগুণে গুণান্বিত শ্রোত্রিয়দের কুলীন উপাধি দিয়েছিলেন।
এই নবগুণ হলো – আচার, বিনয়, জ্ঞান, প্রতিষ্ঠা, তীর্থ দর্শন, নিষ্ঠা, শান্তি, তপ এবং দান। এগুলো ‘কুল লক্ষণ’ নামে ইতিহাসে পরিচিত।
কৌলিন্য পরিবর্তনের জন্য নিয়ম করেছিলেন যে, প্রতি ৩৬ বছরের শেষে গুণ ও কর্ম অনুযায়ী যাচাই/বাছাই করে
কুলীন ও অকুলীন নির্বাচন করা হবে। কৌলিন্য তৈরির এই নিয়মকে সমীকরণ বলা হতো এবং এই সমীকরণ তার পরবর্তী বংশধরদের পালন করার নির্দেশনা দেওয়া হতো।
বিখ্যাত এই সেন রাজার উদ্দেশ্য ছিল, কুলমর্যাদা লাভের জন্য সবাইকে ধার্মিক ও গুণবান তৈরী করা। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, রামগতি তর্করত্ন সহ বিজ্ঞ পন্ডিতগণ, রাজা বল্লাল সেনকে কৌলিন্য প্রথার প্রবর্তক বলেছেন।
সামাজিক সংস্কার এবং কৌলিন্য প্রথা প্রবর্তনকারী হিসেবে ইতিহাসে বিশেষ পরিচিত তিনি।
রাজা বল্লাল সেন রচিত গ্রন্থ
বল্লাল সেন ছিলেন একজন খ্যাতিমান পণ্ডিত এবং লেখক। ব্রতসাগর, আচারসাগর, প্রতিষ্ঠাসাগর, দানসাগর এবং অদ্ভুতসাগর তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য রচনামূলক গ্রন্থ।
তিনি তাঁর জীবদ্দশায় ৫টি গ্রন্থ রচনা শুরু করেছিলেন। এগুলো হলো-
দানসাগর, অদ্ভুতসাগর, ব্রত সাগর, আচারসাগর এবং প্রতিষ্ঠাসাগর। অদ্ভুতসাগর গ্রন্থটি লহ্মণসেন ১১৬৭ সালে সমাপ্ত করেন।
বাম ইতিহাসবিদদের বিকৃতি ও আব্রাহামিক আগ্রাসনের কারণে তাঁর রচিত প্রতিষ্ঠাসাগর গ্রন্থ সম্পর্কে তেমন উল্লেখযোগ্য কিছু জানা যায় না।
তাঁর রচিত দানসাগর গ্রন্থের শিক্ষাদান অধ্যায়ে শিক্ষা ও শিক্ষাদানের সবচেয়ে আদর্শ পদ্ধতি ও প্রক্রিয়ার বিষয়ে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন। সেন বংশের শাসনামলে বাংলায় সংস্কৃত উচ্চশিক্ষার প্রচলিত ব্যবস্থা সম্পর্কে পরিপূর্ণভাবে উল্লেখ করা আছে ভূমিদান ও শিক্ষাদান নামের এই দুই অধ্যায়ে ।
তিনি ১১৬৮ সালে দানসাগর গ্রন্থ এবং ১১৬৯ সালে অদ্ভুতসাগর গ্রন্থ রচনার কাজ শুরু করেন, কিন্তু পরবর্তী সময়ে এই গ্রন্থ দুটির রচনা শেষ করতে পারেন নাই। পরবর্তীতে লক্ষণ সেন এই রচনার কাজ সমাপ্ত করেছিলেন।
বল্লাল সেনের চরিত্র ও কৃতিত্ব
সেন বংশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এই রাজা ন্যায়পরায়ণতার এক উজ্জল দৃষ্টান্ত ছিলেন। তাঁর সবচেয়ে বড় কৃতিত্ত্ব সামাজিক সংস্কার, কৌলিন্য প্রথা ও গ্রন্থ রচনা।
তাঁর রচিত দানসাগর গ্রন্থে শিক্ষকের গুণাবলি সম্পর্কে পরিপূর্ণভাবে তিনি উল্লেখ করেছেন। দানসাগর গ্রন্থের মতে- যেই শিক্ষক অর্থ প্রকাশের উপযুক্ত বাগধারা ও উচ্চারণের প্রয়োজনীয় কৌশলগুলোর সংমিশ্রণে শিক্ষণীয় সংশ্লিষ্ট বিষয়ের অন্তর্নিহিত ও গুহ্যতত্ত্ব যুক্তি পরম্পরায় প্রকাশ করতে সমর্থ, তিনিই শিবের সমতুল্য।
সূর্যের আলো ছাড়া যেমন পৃথিবী অন্ধকারাচ্ছন্ন, তেমনি এসব শাস্ত্রগুলো প্রকৃত শিক্ষকের ব্যাখ্যা ছাড়া দুর্বোধ্য। উচ্চারণের সঠিক কৌশল আয়ত্ব করে শুদ্ধভাবে উচ্চারণে পারদর্শী না হলে এবং ব্যাকরণ, অলংকার ও ন্যায়শাস্ত্রে জ্ঞান না থাকলে, শাস্ত্রের অন্তর্নিহিত তত্ত্ব ও যুক্তিপরম্পরা উপলব্ধি করা ও বুঝিয়ে প্রকাশ করা অসম্ভব।
শিক্ষাদানের এসব গুণের প্রাধান্য অথবা বৈশিষ্ট্য এই আলোচনা থেকেই পরিষ্কার হয়। এখানে আরেকটি বিষয় বুঝতে হবে, প্রাক্ পাণিনি বৈদিক ভাষায় বহুঅংশেই উচ্চারণ অনুযায়ী অর্থভেদ হতো। অতএব, এজন্যই একজন শিক্ষকের অবশ্য কর্তব্য ছিল সঠিকভাবে উচ্চারণের কৌশল আয়ত্ব করা।
এই কারণে তৎকালীন সময়ে ছন্দোবদ্ধ আবৃত্তি ছিল একটি সুকুমার কলা। শিক্ষকের নিকট থেকে শ্রবণ মন্ত্র নির্দিষ্ট ছন্দে ও নির্দিষ্ট ধ্বনি সহযোগে ছাত্রকে রপ্ত করতে এবং মনে রাখতে হতো।
এই সেন রাজার মতে- একজন উত্তম শিক্ষক সুদক্ষ, প্রখর বুদ্ধির অধিকারী, জ্ঞানী ও পণ্ডিত ব্রাহ্মণ, যে শিক্ষক শুধু লিপির সঠিক অর্থ বুঝতে সমর্থ হবেন না, সেই সাথে ছন্দবিজ্ঞান ও শব্দশাস্ত্রেও তাঁর অপরিসীম দক্ষতা থাকতে হবে।
সঠিক উচ্চারণ ও সুকণ্ঠের অধিকারী হবে সেই শিক্ষক। এছাড়াও জ্ঞান ও বিদ্যার বিভিন্ন শাখায় তাঁর অধিকার থাকবে।
দানসাগর গ্রন্থে বর্ণনাকৃত এসব যোগ্যতা সম্পন্ন ও গুণী শিক্ষক নিশ্চয়ই দুর্লভ ছিল। এই ধরণের একজন শিক্ষককে উজ্জ্বল সূর্যের সঙ্গে তুলনা করে বর্ণনা করা হয়েছে-
সূর্য যেমন তাঁর আলোকিত রশ্মির মাধ্যমে পৃথিবী থেকে সব অন্ধকার দূর করে, তেমনি এমন একজন প্রকৃত শিক্ষক তাঁর প্রাজ্ঞ উচ্চারণের মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থীর মনের অজ্ঞতার অন্ধকার দূর করে জ্ঞানের আলোতে আলোকিতময় করে তোলেন।
বিদ্যা লাভে ইচ্ছুক একজন শিক্ষার্থী কীভাবে তাঁর শিক্ষকের ব্যাখ্যা শুনবে এবং কীভাবে পাণ্ডুলিপি পাঠ করবে, এই বিষয়েও দানসাগর গ্রন্থে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
ঢাকা শহরের নামকরণের ইতিহাস
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরের নামকরণের পিছনে মূল অবদান এই সেন রাজার। জনশ্রুতি আছে- রাজা বল্লাল সেন বুড়িগঙ্গা নদীর তীরবর্তী এলাকায় ভ্রমণ করার সময়, নিকটবর্তী একটু জঙ্গলের মধ্যে দুর্গাদেবীর একটি প্রতিমা খুঁজে পেয়েছিলেন।
এরপর এই রাজা দেবী দুর্গার প্রতি শ্রদ্ধাস্বরূপ ঐ অঞ্চলে একটি মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি দেবীর বিগ্রহ ঢাকা অর্থাৎ গুপ্ত অবস্থায় খুঁজে পেয়েছিলেন, এজন্যই তাঁর প্রতিষ্ঠিত ঐ মন্দিরের নামকরণ করেন “ঢাকেশ্বরী মন্দির”। পরবর্তীতে এই মন্দিরের নাম থেকেই ঐ অঞ্চলটির নাম ঢাকা হিসেবে পরিচিত হয়।
বল্লাল সেনের শেষ জীবন ও তাঁর সংক্ষিপ্ত রচনা
অদ্ভুতসাগর গ্রন্থ অনুযায়ী- বার্ধক্য উপনীত হলে বল্লাল সেন, রাজ্যের শাসনভার নিজ পুত্র লক্ষ্মণসেনকে প্রদান করেছিলেন। উল্লেখ্য, লক্ষ্মণসেনই ছিলেন সেন বংশের শেষ শাসক রাজা লক্ষ্মণসেন। এরপর স্ত্রী রামদেবীকে নিয়ে ত্রিবেণীর নিকট গঙ্গাতীরবর্তী একটি এলাকায় জীবনের শেষ দিনগুলো অতিবাহিত করেন।
তাঁর সময়কালীন নৈহাটি তাম্রশাসন এবং সনোকার মূর্তিলিপি নামে দুটি লিপি ও কিছু তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেলেও, এসব নিদর্শনে তাঁর রাজ্য জয় সম্পর্কিত কোন তথ্যের উল্লেখ নেই। অদ্ভুতসাগর গ্রন্থ থেকে গৌড়রাজের সাথে বরলাল সেনের যুদ্ধের কথা জানা যায়। ঐতিহাসিকদের মতে, এই গৌড়রাজ ছিলেন পাল সাম্রাজ্যের রাজা গোবিন্দপাল।
গ্রন্থে উল্লেখিত তথ্য অনুযায়ী- বরলাল সেন, মগধ রাজ্যে পাল শাসকদের উপর চূড়ান্ত আঘাত করেন এবং পিতা বিজয় সেনের শাসনামলেই মিথিলা রাজ্য জয় করেছিলেন। গৌড় ও বাংলাভূমির রাজ সিংহাসন তিনি উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত হয়েছিলেন। পরবর্তীতে তিনি বরেন্দ্রভূমি, রাঢ়, বাংলার অন্য এলাকা এবং বগ্দি নামক অঞ্চল নিজ অধীনস্থ করেন।
বল্লাল সেনের ঢিবি
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলাতে বহু প্রত্নতত্বের নিদর্শন সমৃদ্ধ বল্লাল সেনের ঢিবি আছে। তবে এসব ঢিবি গুলোর মধ্যে নদীয়া জেলার বামুনপুকুর বাজারে অবস্থিত বল্লাল সেনের ঢিবি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন হিসাবে আজও কালের সাক্ষী হয়ে আছে। অদ্ভুদসাগর গ্রন্থ অনুযায়ী এই ঢিবির বয়স ৮০০ বছরের বেশি।
অন্যান্য ঢিবি গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-
১. খনা-মিহিরের ঢিবি নামে পরিচিত চন্দ্রকেতু গড়ের ধ্বংসাবশেষ। এটার অবস্থান উত্তর চব্বিশ পরগনায় বেড়াচাঁপা গ্রামে।
২. বর্ধমানে আউষগ্রামে অবস্থিত পাণ্ডুরাজার ঢিবি।
৩. পশ্চিম মেদিনীপুরে মোগলমারিতে রয়েছে “শশীসেন ঢিপি”।
৪. দমদমা ঢিবির অবস্থান দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলায় আটঘরা নামক এলাকায়। এই ঢিবি ও কালের গ্রাসে বর্তমানে ধ্বংসপ্রাপ্ত।
বল্লাল সেন কর্তৃক প্রবর্তিত মুদ্রা উদ্ধার
সম্প্রতি বীরভূমের মুরারৈ গ্রামের কাছে বাঁশৈলী নদীর তীরে বেশ কিছু মুদ্রা আবিষ্কার হয়েছে। ৩ জন মোট ৯ টি পেয়েছেন। এই প্রতিবেদন ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকাতে প্রকাশিত হয়েছিল।
রামপুরহাট মহকুমায় নদীর পাড়ে থেকে পাওয়া এই স্বর্ণমুদ্রাগুলিকে ‘ফনম’ বলা হয় এবং সাধারণ ভাবে এগুলির ওজন আধ গ্রামের ও কম হয়। ব্যাস মাত্র ০.৫ থেকে ০.৮ মিলিমিটার এর মধ্যে। মুদ্রার মুখ্য দিকে একটি মাটিতে উপবেশনরত ষাঁড়ের প্রতিকৃতি দেখা যায়, সঙ্গে অন্য কোনও চিহ্ন।
গৌণ দিকে, একটি ‘স’ অক্ষর লেখা থাকে, সঙ্গে অঙ্কুশ বা ত্রিশূল। এর নীচে থাকে একটি সংখ্যা যা রাজত্বের বছর নির্দেশ করে। এঁরা অঙ্ক পদ্ধতি ব্যবহার করতেন। প্রাপ্ত মুদ্রা তিনটিতে ‘৫’ সংখ্যা উৎকীর্ণ আছে বলে মনে হয়।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক সুতপা সিংহ উক্ত স্বর্ণমুদ্রাগুলোর গঙ্গ বংশের ৪র্থ ভানুদেবের মুদ্রার সাথে সাদৃশ্য দেখে ওড়িশার পূর্ব গঙ্গ বংশীয় কোনও রাজার বলেছেন।
তবে স্থানীয় ইতিহাসের গবেষক অনির্বাণ জ্যোতি সিংহ দাবি করেছেন- গঙ্গ রাজবংশের পাশাপাশি এই মুদ্রার সেন বংশের সাথে সম্পৃক্ত হবার বিষয়কেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।
উনি বলেন “যে এলাকায় এমন প্রাচীন যুগের সোনার মুদ্রা পাওয়া গিয়েছে সেই এলাকার (বীর নগর) সেন রাজাদের পূর্ব বংশীয় শাসক দল এখানে রাজত্ব করেছেন। এখানকার এই সেন বংশের সঙ্গে ভাদিশ্বরের ভদ্রেশ্বর সেন, এমনকি পাইকরের সঙ্গেও যোগাযোগ ছিল।”
[ ভদ্র সেন লক্ষণ সেনের পুত্র কেশব সেনের বংশীয় নীচে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে]
১৪০০ খ্রিস্টাব্দে এই ধরনের মুদ্রার বহুল প্রচলন ছিল ঠিক। কিন্তু ভানুদেব চতুর্থর একি ধরণের ফোনম কয়েন পাওয়া গেছে এই যুক্তিতে এই মুদ্রাটি গঙ্গা মুদ্রা বলা যায় না। একাদশ থেকে যোড়শ শতাব্দী পর্যন্ত ভারতের বিভিন্ন রাজশক্তি ফোনম কয়েন ব্যাবহার করত।
চালুক্য বিজয় নগরের মত বড়ো সাম্রাজ্য এমনকি ১৭-১৮ শতাব্দীর কিছু দেশীয় রাজ্যেও ফোনম কয়েন ব্যবহার করতেন। এটা সেন মুদ্রা হবার প্রভূত সম্ভাবনা আছে।
প্রথমত, ১১ থেকে ১৩ শতকের যে সময় এই অঞ্চল সেন শাসনাধীনেই ছিল। ১২৯০ খ্রিস্টাব্দে শাহ সুফী, জাফর খাঁ গাজির অভিযানের আগে রাঢ়ে তুর্কি শাসন দৃঢ় ছিল না।
দ্বিতীয়ত স্বর্ণমুদ্রার প্রচলন ছিল বলেই বিহার প্রদেশের বখতিয়ারের দেবীকোটে জারি করা মুদ্রা স্বর্ণ নির্মীত ছিল (উত্তরবঙ্গের এই অঞ্চলকে গৌড় না দেবীকোট হিসেবেই লেখা আছে তোয়াকত ই নাসিরীতে)
তৃতীয়ত সেন রাজাদের মুদ্রা ব্যবস্থার ইতিহাস খুঁজলে কর্পদক (কড়ি) ও পুরাণের (রুপো) উল্লেখ পাওয়া যায়।তবকাতে নাসিরিতেও লক্ষণ সেনের রৌপ্যমুদ্রা দানের উল্লেখ রয়েছে।
তবে সেন রাজাদের কালে সোনার মুদ্রা ছিল না এমন নয়। বল্লাল চরিতে সোনার মুদ্রার বহুল উল্লেখ পাওয়া যায় ।স্বর্ণমুদ্রার উল্লেখ রৌপ্য মুদ্রার তুলনায় কম। তার অন্যতম কারণ ছিল সুবর্ণবণিকদের সাথে বিবাদ। বল্লালচরিতে তার কিছু উল্লেখ পাওয়া যায় –
বল্লাল সেন ও শ্রেষ্ঠী বল্লভানন্দের বিবাদ
ওদন্তপুরের রাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য বল্লভানন্দ নামে এক ধনী ব্যক্তির থেকে রাজা বল্লাল সেন দেড় কোটি সুবর্ণমুদ্রা ধার চান। কিন্তু তার বিনিময়ে হরিকেলের রাজস্ব দাবি করেন। তাতে বল্লাল সেন রেগে যান। প্রথমে তিনি দ্বিগুণ শুল্ক গ্রহণের নির্দেশ দেন বণিকদের।
তাতেও কাজ না হলে ভোজসভায় আমন্ত্রিত বণিক প্রতিনিধিদের শুদ্রদের পঙতিতে বসান। বণিকরাও সৎশূদ্রদের সঙ্গে আহারে আপত্তি রয়েছে বলে রাজপ্রাসাদে খাওয়াদাওয়ার আমন্ত্রণ ফিরিয়ে দেন। বণিকরা প্রতিবাদ করলে রাজকুমার ভীমসেন (বল্লালের আরেক পুত্র) তাদের গালি দিয়ে ফেলেন।
রুষ্ট হয়ে বণিকরা ভোজসভা ত্যাগ করেন। বল্লাল সেন তাতে আরও রেগে গিয়ে বল্লাল রাজাদেশ অবজ্ঞার ছুতো করে বণিকদের শূদ্রের স্তরে নামিয়ে দেন ও তাঁদের উপননয়নের অধিকার কেড়ে নেন। বণিকরা তখন দাসদের সম্পত্তি দিয়ে হাত করেন। বল্লাল সেনও কৈবর্তদের জলচল করে দেন।
শেষপর্যন্ত ব্যবসায়ীরা আর বৈশ্য রইলেন না। এরপরে সেনদের মুদ্রামাণে প্রভাব অবশ্যই পড়ে (সোনার স্থলে রৌপ্য মুদ্রা)কিন্তু ধাতুমুদ্রা বন্ধ হয়ে যায়নি।
সেনযুগীয় বিভিন্ন লেখে মুদ্রার নাম নিয়মিত উল্লেখ হয়েছে, যেমন পুরাণ, ‘দ্রোন’, ‘দ্রম’। এই পদগুলি 32 রতি (56.6 Garain = 3 Gram) ওজনের একটি রৌপ্য মুদ্রা বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছিল। কপর্দক-পুরাণ শব্দটিকে সেন রাজা এবং অন্যান্য সমসাময়িক রাজাদের লেখায় বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে দেখা যায়।
করপদক মানে কড়ি; আর ‘পুরাণ’ অবশ্যই এক ধরনের রৌপ্য মুদ্রা। ‘কপর্দক-পুরাণ’ যোগসূত্রটি বিনিময়ের একটি মাধ্যমকে বোঝায়। বাংলার ঐতিহ্যবাহী পাটিগণিতের সারণীতে একটি রৌপ্য মুদ্রার (পুরাণ বা ড্রামা) গুণমান 1260 টি কড়ির সমানুপাতিক ধরা রয়েছে।
সেন সাম্রাজ্যের বিভাজন ও পশ্চিম সেন সাম্রাজ্য
‘চতুর্বিংশোত্তরে শাকে সহস্রৈক শতাব্দীকে।
বে হার পাটনাত্ পূৰ্ব্বংৰ্ব্ব তুরস্কঃ সমপুাগতঃ।।'[ 13]
গৌড়েশ্বর কেশব সেন (1206-1217 CE)
মাধব সেনের সন্ন্যাস গ্রহণের পর কেশব সেন গৌড়ের শাসক হন। তিনি একজন ধার্মিক সম্রাট মহাবীর যোদ্ধা ছিলেন। এবং ব্যক্তিগত জীবনে সৌর উপাসক ছিলেন।
এটি হরি মিশ্রের কারিকায় লেখা আছে,
बल्लाल तनयो राजा लक्ष्मणोवत महाशयः
ततपत्रु केशवो राजा गौड़ राज्यंबि हाय स: “[2][8]
কুলচার্য এডু মিশ্র বর্ণনা করেছেন
“नपृंतांकेशवो भपूति सेन्यबिप्रगनौ:
पितामहकृतै रणौश्च यक्तगेतः तां चक्रे
नपृतिर्महर्मादरतया सन्मानयन जीविकां
तदवर्गस्य च तस्य च प्रथमतश चक्रे प्रतिष्ठान्वित”
[1][2]
এ সময় মহম্মদ আলী মর্দান দেবীকোট থেকে গৌড় আক্রমণ করেন।
দুর্ভাগ্যবশত খিলজিরা 1215 খ্রিস্টাব্দে কিছু বিশ্বাসঘাতকের কারণে গৌড় জয় করতে সক্ষম হয়। কেশব সেনএ সময় রাঢ়ে চলে আসেন এবং রাজনগরে তার রাজধানী স্থাপন করেন।
এই সময়ে রাঢ় অঞ্চল কেশব সেন এবং বঙ্গ অঞ্চল বিশ্বরূপ সেন সুরক্ষিত রাখেন। মিনহাজ লিখেছেন যে জাজনগর বা উৎকলের উত্তর অংশ ছিল মহারাজা লক্ষ্মণ সেনের অধীনস্থ, কেশব সেন উৎকলের সেই পৈতৃক অধিকার ধরে রাখতে সক্ষম হন।
তিনি আর থেকে শাসন করেছিলেন বীরভূমের আজনগর থেকে ওড়িশার জাজনগর। তিনি গৌড় পুনরুদ্ধারে একাধিকবার লক্ষনৌর বা রাজনগর এবংউড়িষ্যা থেকে সৈন্য সংগ্রহ করেন। ধর্মীয় বিশ্বাসে তিনি ছিলেন একজন সূর্য উপাসক ‘পরমসৌর।তিনি বিভিন্ন নামে পরিচিত – —
समस्त सप्रुस्तपेत अश्वपति गजपति नर पति राजत्रयाधि पति सेनकुलकमल विकाशभास्कर सोमवशं प्रदीप
प्रति पन्नदा न कर्णसर्ण त्यव्रत गांगेय शरणगतबज्रपथंर परमेश्वर परमभट्टारक परमसौर महारा
जराजाधि राजारि राज धातकु शंकर गौड़ेश्वरा”[2]
গৌডেরও পশ্চিম সেন সাম্রাজ্যের পতন
বীর সেন: কেশব সেনের পর বীর সেন রাজা হন। 1223 খ্রিস্টাব্দে গিয়াসউদ্দিন ইওয়াজ খিলজি রাহ আক্রমণ করে। বীরসিংহপুরের রাজা সামন্ত প্রভু বীর সিং বীরসেনের সাথে লড়েন। গিয়াসউদ্দিন ইওয়াজ পরাজিত হয়ে পালিয়ে যান। আরও দুই যোদ্ধা রুদ্র নারায়ণ রায় এবং বীর সিংয়ের ভাই চৈতন্য সিংহের সাহসিকতার সাথে বীরসিংহপুরের যুদ্ধে লড়েছিলেন।
কিন্তু দ্বিতীয় যুদ্ধে হিন্দুরা অস্ত্র হাতে নেয়নি এবং যুদ্ধে পরাজিত হয়। ইয়ুঝ গরুর পাল সামনে রেখে যুদ্ধ করেন। মহিলারা জওহরব্রত পালন করেন। এ সময় খিলজিরা রাজনগর (লখনৌর) দখল করে এবং রাজা বীর সেন পশ্চিমে চলে যান।
চন্দ্রপাহাড়িতে একটি নতুন রাজধানী স্থাপন করেন। পশ্চিম সেন সাম্রাজ্য ভেঙে পড়ে। নতুন অনেক ছোট রাজ্য তৈরি হয়।(যেমন- ভালকি, কাঁকশা, মল্ল, শিখর, ত্রিবেণী ,ভেদিয়াবালিয়া-বাসন্তী, ছাতনা, উজানি, মান্দার, চন্দ্র পাহাড়ি)
চন্দ্র সেন ও ভদ্র সেন:
বীর সেনের পুত্র চন্দ্রসেনের রাজধানী ছিল চন্দ্র পাহাড়ীতেভদ্রসেনের রাজধানী ছিল ভদ্রকালীতে। পশ্চিম সেন রাজবংশের চন্দ্রপাহাডীরর চন্দ্র সেনের একটি শিলালিপিও রয়েছে। চন্দ্র সে ন নপৃ তি রণসে ন নাম্না।
এটি কাটোয়ার হোসেন শাহী মসজিদে পাওয়া যায়। নিঃসন্দেহে এই মসজিদটি একটি বিষ্ণু মন্দিরের উপর নির্মিত। মন্দিরটি চন্দ্র সেনের নির্মিত মন্দিরটি সম্ভবত মঙ্গলকোট গাজিদের আক্রমণের সময় ধ্বংস হয়েছিল।
সুদর্শন সেন: তিনি গোপভূমের রাজা মহেন্দ্র সিংহের কাছে পরাজিত হন। কাছে পরাজিত । সেন রাজবংশের শেষ রাজা ছিলেনতিনি। সদগোপ কুলজীতে তাঁর নাম গৌড়েশ্বর সুদর্শন সেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
পশ্চিম সেন সাম্রাজ্য
লক্ষ্মণ সেনের মৃত্যুর পর, তার পুত্র কেশব ও বিশ্বরূপ সেন একাধিক তুর্কি আক্রমণ প্রতিরোধ করেছিলেন। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হল ১২২৫ সালে গিয়াসউদ্দিন ইলিয়াস খিলজির পরাজয়, যখন বিশ্বরূপসেন গর্গ উপজাতিকে পরাজিত করেন এবং গৌড় পুনর্দখল করেন।
লক্ষ্মণ সেনের মৃত্যুর পর সেন সাম্রাজ্য ২ ভাগ হয়ে যায়। কেশব পায় পশ্চিম অংশ আর বিশ্বরূপ পায় পূর্ব অংশ। জয়সেন বিশ্বাসের ‘সদবৈদ্য কুল চন্দ্রিকা’-এ আমরা এর উল্লেখ পাই।
শ্রীমল্লক্ষ্মণসে নস্য জজ্ঞিরে পুত্র কাস্ত্রয়ঃ ।
ধৰ্ম্মপালসুতারাঞ্চ বসুদেধ্যাস্তনদ্ভূবাঃ।
অগ্রজো মাধবস্তেষু পূৰ্ব্বমেৰ্ব্বমেব দিবং যযৌ ।
কেশবো বিশ্বরূপশ্চ রাজ্যভাঞ্জৌ বভূবতুঃ ॥
পূর্ব্বরর্ব্বাজ্যং রামপালং বিশ্বরূপোঽমজুজোঽশিষৎ।
কেশবঃ পশ্চিমে ভাগে গৌড়াখ্যেহভূন্নরাধি পঃ ।
স লাক্ষ্মণেয় নাম্নাসী প্রসিদ্ধঃ পিতৃনামতঃ।
জানে ন কর্ণ:র্ণ শৌর্য্যেণ ভীমঃ পরমধাৰ্ম্মিকঃ ॥
তাস্যামাত্যঃ পশুপতিরভূ বিশ্বাসঘাতকৃৎ ।
যো লোভেন যবণায় সমাপৎ
রামপালং গতং ভূপং মন্ত্রণায়ানুজেন সঃ।
বিদিত্বা পাপকগ্রাত্রৌ দুর্গদ্বারমপাবৃণোৎ ।
এবঞ্চ দর্শনে তস্যাভিষেকাদ্বৎসরেশুভে ।
অর্থাৎ কেশব ও বিশ্বরূপ যথাক্রমে গৌড় ও রামপাল প্রদেশ পায়। সুবিধা গ্রহণ করা মহারাজ কেশবের অনুপস্থিতিতে পশুপতি নামে এক মন্ত্রী দুর্গের দরজা খুলে দেন।
- পশুপতি মিশ্র লক্ষ্মণ সেনের রাজসভার অন্যতম ছিলেন।
- এটি ইঙ্গিত দেয় যে সেন রাজ্যের কর্মকর্তারা যথেষ্ট পরিমাণে দুর্নীতিবাজ ছিলেন।
রাজধানী লখনৌতি দখল করা হয়। কেশব সেন লখনউরে একটি নতুন রাজধানী স্থাপন করেন এবং লখনৌতি পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করেছিল।
এই দুর্দশার মধ্যেও কেশব পূর্ব সেন সাম্রাজ্যের কাছ থেকে কোনো সাহায্য পাননি। নগেন্দ্রনাথ বোস এর জন্য পারিবারিক কলহের উল্লেখ করেন
১২১৫ খ্রিস্টাব্দে আলীমর্দন দেবীকোটে আসেন এবং শাসনভার গ্রহণ করেন। মিনহাজ লিখেছেনআলিমর্দন লক্ষ্মণাবতী/লখনৌতীকে তাঁর নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন।
প্রাপ্ত মুদ্রার সময়কাল
প্রাপ্ত মুদ্রায় একদিকে বৃষ (নন্দী) ও অপর পৃষ্ঠে ত্রিশুল অঙ্কিত। সুতরাং এটি কোন শৈব শাসকের মুদ্রা। এবং সেন শাসকদের রাস্ট্রধর্ম শৈব ছিল এই কারণেই তাম্রশাসনে সদাশিব চিহ্ন থাকত। সুতরাং মুদ্রাটি সেন রাজাদের হবার সম্ভাবনা প্রবল।
শৈব সেন রাজারা বর্ষবরণ উপলক্ষে চড়ক পূজা করতেন,এ উৎসবে শিবের গাজন হত, নীল পূজা হত। বাঙলার বাহিরে বিহার (মিথিলা) রাজ্যে এখনো শিবের গাজনকে লক্ষণ সম্বৎ বলে পালিত হয়। নাথপন্থীদের প্রধান উৎসবি ছিল চড়ক। বল্লালচরিত থেকে জানা যায়, প্রথম জীবনে বল্লাল সেন নাথপন্থায় দীক্ষা নেন ও পরবর্তীতে শাক্ত হন।
লক্ষণ সেনের জন্মের সময়কালে বল্লাল সেন মিথিলা জয় করেন এবং লক্ষণ সম্বত চালু করেন। এই পঞ্জিকা সালের সূচনা সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের মাঝে মতপার্থক্য থাকলেও অধিকাংশ ইতিহাসবিদ একমত হয়েছেন যে এর প্রথম বর্ষ শুরু হয়েছে ১১১৮-১১১৯ খ্রিস্টাব্দে।
মৈথিলী-ভাষী পণ্ডিতগণ বিদ্যাপতির লেখাপত্র ব্যবহার করতেন যেখানে তিনি লক্ষণাব্দ ও শকাব্দ ব্যবহার করেছিলেন। এই মুদ্রার খোদিত ৫ শব্দটি সম্ভবত লক্ষণ সংবতকেই সূচিত করে। সম্ভবত বীরভূমের লখনৌর নগর এই সময়কালেই বল্লাল সেন নির্মাণ করেন।
এর খুব কাছাকাছিই বর্ধমানে বল্লাল প্রতিষ্ঠিত রাঢ়েশ্বর শিবমন্দির বর্তমান। এই মন্দিরো সম্ভবত সেই সময়কালেই নির্মীত। সুতরাং এই মুদ্রাগুলো ১১২৩ খ্রি নাগাদ প্রদত্ত হয়। পরবর্তীতে যখন লক্ষণ সেন কলিঙ্গ জয় করেন তার পর গঙ্গা বংশ ফোনম মুদ্রা তৈরি শুরু করে।
* এইসময় মালদার উত্তর পূর্ব দিয়ে গঙ্গার গতিপথ ছিল। লখনৌতি গৌড় মালদার দক্ষিণ ও দেবীকোট উত্তরে ছিল।
Reference –
1.পাল-সেন যুগের বংশানচুরিত , Dr. Dinesh Chandra Sarkar
- বঙ্গের জাতীয় ইতিহাস (“National History of Bengal” – Rajanya Kand), Nagendra Nath Basu,302,347,354,357 page
- গৌড়ের ইতিহাস রজনীকান্ত চক্রবর্তী
4. বংশ পরিচয়, জ্ঞানেন্দ্রনাথ কুমার। তৃতীয় খন্ড pp 468
- National History of Bengal ‘Rajanya Kand. Nagendra Nath Basu 357
- West Bengal District gazeters Birbhum – Durgadas Majumdar Pp 91
- ঢাকার ইতিহাস-যতীন্দ্রমোহন রায় 2nd part,Pp 404,415
- Brihat Banga – Dinesh Chandra Sen. 541 page
9. পশ্চি মবঙ্গের সংস্কৃতি – বিনয় ঘোষ Pp 285
10. গোপভূমের স্বরুপ ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি শি বশঙ্কর ঘোষ pp 309
11. বীরভূমের ইতিহাস (History of Birbhum), Gaurihar Mitro, pp. 36-41
- Sad Vaidya Kool Chandrika Jaisen Viswas
13. ঢাকার ইতি হাস-যতীন্দ্রমোহন রায় দ্বিতীয় খন্ড
- বর্ধমান সমগ্র গোপীকান্ত কুমার pp 487
- সদগোপ কুলীন সংহিতা 24 page
16. Bardhaman Samagra – Gopikanth Konar 487
17. SAFFRON SWORDS Centuries of Indic Resistance to Invaders, Manoshi Sinha
18. West Bengal District gazeters Birbhum – Durgadas Majumdar Pp 92,93,95
তথ্য সংগ্রহ ও আর্টিকেল রচনা-
B tech ceramic Technology