ধর্মবিজ্ঞান ও প্রযুক্তিসনাতন ধর্ম

বিজ্ঞানের সৃষ্টি বেদ থেকে | সনাতন ধর্ম ও বিজ্ঞান

সনাতন ধর্ম ও বিজ্ঞান
Spread the love
ধর্ম ও বিজ্ঞান
বেদ, সনাতন ধর্ম ও বিজ্ঞান

সনাতন ধর্মের প্রধান গ্রন্থ পবিত্র বেদের আলোতে আলোকিত ময় মুনি, ঋষিদের মাধ্যমে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সর্বপ্রথম আবিস্কার প্রাচীন ভারতবর্ষে হয়েছিল!

সনাতন ধর্মের প্রধান ধর্মীয় গ্রন্থ বেদ শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞান। 

Table of Contents

বেদ থেকে বিজ্ঞানের সৃষ্টি :

বিজ্ঞানের সৃষ্টি হয়েছে বেদ থেকে। অপরা বিদ‍্যা এবং বিজ্ঞান, বেদ থেকেই গ্রহণ করা হয়েছে।
ঋষিদের ধ‍্যানের মাধ্যমে পাওয়া পবিত্র বেদ, আদিকাল থেকেই আমাদের বিজ্ঞানসম্মত তত্ত্ব প্রদান করে আসছে।

প্রাচীন ভারতীয় শিক্ষা ব্যাবস্থা :

অজন্তার গুহাচিত্রের মাধ্যমে বিশ্বের প্রথম ও প্রাচীন নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের ধ্বংসাবশেষ,
বৃহদেশ্বর মন্দির থেকে পাওয়া সম্রাট অশোকের শিলালিপি সহ সমগ্র ভারতবর্ষে ছড়িয়ে থাকা অগণিত প্রাচীন সনাতনী মন্দির,
বিভিন্ন স্থাপত্য এই ভারতবর্ষের গৌরবময় ইতিহাস, আধ্যাত্মিকতা, সংস্কার, সামাজিক ব‍্যাবস্থা শুধু প্রথম উন্নত সমাজবদ্ধ ও সুশৃঙ্খল জাতি হিসাবে দাবী নির্দেশ করা ছাড়াও,
উন্নত বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতার প্রমাণ দেয়।

এই উপমহাদেশের প্রাচীন এসব নিদর্শন আমাদের পূর্বপুরুষদের উন্নত জ্ঞান, বিজ্ঞানচেতনা ও তার প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতার পরিচয় প্রদান করে।

বেদের আলোই বিজ্ঞানের আলো বিজ্ঞানের সৃষ্টি বেদ থেকে :

বেদের আলোকে আলোকিতময় এই জ্ঞানী ঋষিগণ, মানবসভ্যতার মঙ্গলের জন‍্য সনাতনী জ্ঞানের প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করে আলোকবর্তিতা প্রদর্শন করেছেন আমাদের।

ধর্মীয় আধ্যাত্মিকতা এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অপূর্ব মেলবন্ধনে সমৃদ্ধ প্রাচীন ভারতের মন্দির ও স্থাপত্য।

প্রস্তরনির্মিত এসব উচ্চতম প্রাচীন ভারতীয় স্থাপত্যগুলো কয়েক হাজার বছর অতিক্রম করেও ইতিহাসের নিদর্শনসহ আজও অবিচল, যেটি প্রাচীন ভারতের উন্নত বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি ও দক্ষতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত।

প্রযুক্তি বলতে বুঝায়; কৌশল, দক্ষতা, পদ্ধতি ও প্রক্রিয়ার সমষ্টি যা পণ্য উৎপাদন / সেবা অথবা আমাদের দৈনন্দিন কর্ম ও জীবনযাত্রার উদ্দেশ্য সাধনে ব্যবহৃত হয়।

যান্ত্রিক কৌশল প্রযুক্তির একটা অংশমাত্র।
অন্যান‍্য সকল সভ্যতা থেকে, প্রাচীন ভারতবর্ষের সভ‍্যতা সবদিকেই তুলনামূলক ভাবে অনেক উন্নত ছিল।

এ বিষয়ে বর্তমানের প্রায় সব বিজ্ঞানীগণ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে স্বীকার করেন, এবং আশ্চর্যজনক বলে মত প্রকাশ করেন।

বিজ্ঞান সন্মত ধর্ম সনাতন ধর্ম | সনাতন ধর্ম কেন শ্রেষ্ঠ

পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীনতম বিজ্ঞান সন্মত ধর্ম, সনাতন ধর্ম। সনাতন ধর্মের প্রতিটি ধর্মাচরণে কোন না কোন ভাবে বৈজ্ঞানিক ব‍্যাখ‍্যা পাওয়া যায়।

বিজ্ঞানের মূল উৎস সনাতনী গ্রন্থ বেদ অর্থাৎ, বিজ্ঞানের সৃষ্টি হয়েছে বেদ থেকে। হাজার হাজার বছরের বিবর্তন এবং লুটেরাদের হিংস্র আক্রমণ ও আগ্রাসনে আমাদের গৌরবময় ইতিহাসের অনেককিছুই হারিয়ে গেছে৷

একটি সভ্যতা যখন ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়, তখন সেখানকার প্রযুক্তি ও বৈজ্ঞানিক কৌশল হারিয়ে যায়।
এই কারণে ধ্বংসপ্রাপ্ত সভ্যতা থেকে বহু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় প্রমাণের অভাবে আমাদের অজানা থাকে।

you may also like… প্রথম মহিলা দার্শনিক ঋষিকা মৈত্রেয়ী

সনাতন ধর্মের মুনি ঋষিদের আবিষ্কার :

প্রাচীন ভারতবর্ষের মুনি ঋষিদের কিছু আবিস্কার, বেদের বৈজ্ঞানিক কিছু তথ‍্য, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পর্কে তৎকালীন অগ্রগতি, সনাতনী ও ইতিহাস গ্রন্থ থেকে পাঠকদের জন‍্য কিছু বর্ণনা তুলে ধরা হল :

পৃথিবীর গতি, সূর্য ও চন্দ্র সম্পর্কে পবিত্র বেদের বাণী :

পৃথিবী সম্পূর্ণ স্থির ও গতিহীন অবস্থায় আছে – প্রাচীন কয়েকটি সভ্যতা ও বিধর্মীদের একটি গ্রন্থে উল্লেখ আছে।
বিখ্যাত কয়েকজন প্রাচীন দার্শনিক, জ্যোতির্বিদ, বিজ্ঞানী, গণিতবিদ, এমনকি টলেমী তাঁর Theory of Jiochentrisome -তে উল্লেখ করেছেন, পৃথিবী সম্পূর্ণ স্থির এবং সূর্য সহ অন্য সকল গ্রহ নক্ষত্রগুলো পৃথিবীর চারিদিকে ঘুর্ণায়মান।

ষোড়শ শতাব্দী পর্যন্ত এই মতবাদ ছিল। কোপার্নিকাস একসময় প্রমাণ করেন, পৃথিবী স্থির নয় গতিশীল এবং পৃথিবী সহ অন্য সকল গ্রহ সূর্যের চারিদিকে ঘূর্ণায়মান।

পরবর্তীতে পৃথিবীর গতি প্রমাণিত হয় যখন বিজ্ঞান বলল, সূর্যই সম্পূর্ণ স্থির এবং পৃথিবীসহ অন্যান্য গ্রহ নক্ষত্র সূর্যের চারিদিকে ঘূর্ণায়মান।

তারপর বহু সময় পরে আধুনিক বিজ্ঞান প্রমাণ করে, এরকম কোন বস্তু এই মহাবিশ্বে নেই যেটা স্থির অথবা সম্পূর্ণ নিশ্চল অবস্থায় আছে।

অর্থাৎ, বিজ্ঞানের মতে সমগ্র সৃষ্টি গতিশীল। আধুনিক যুগ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগ এবং আমরা পৃথিবীর সৃষ্টি ও মহাবিশ্ব সম্পর্কে যা কিছু এ পযর্ন্ত জানতে পেরেছি, তার সবই জানতে পেরেছি বিজ্ঞানের মাধ্যমে।

আধুনিক বিজ্ঞানের বহু পূর্বে এই মহাবিশ্বে বিজ্ঞান ছিল, এটা আমাদের ধারণার বাইরে! সবচেয়ে বড় কথা, এই বিজ্ঞানের সৃষ্টি হয়েছিল, সনাতন তথা হিন্দু ধর্মের প্রধান ধর্মগ্রন্থ বেদ থেকে।

আমেরিকার স‍নামধন‍্য লেখক ডেভিড ফ্রালি বলেছেন; পৃথিবীতে যখন শিক্ষা ব‍্যাবস্থা ছিল না, তখন ভারতীয় হিন্দুগণ গুরুকূলের মাধ্যমে বেদ শিক্ষা গ্রহণ করত।

এই বিশ্বের প্রথম দুটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় তক্ষশিলা বিশ্ববিদ্যালয় ও নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় এই ভারতবর্ষে স্থাপিত ছিল। এই মহাবিশ্বের সমগ্র সৃষ্টি ও মানব জাতির কল‍্যাণের জন্য এসব বৈজ্ঞানিক তথ‍্য বেদে লিপিবদ্ধ আছে।

বর্তমানের আধুনিক বিজ্ঞান, কয়েক দশক আগে প্রমাণ করেছে পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরে।

পৃথিবীর গতি সম্পর্কে বেদ ও মুনি ঋষিদের আবিষ্কার :

এবার দেখে নিই এ বিষয়ে পবিত্র বেদের বাণী-

আহস্তা যদপদী বর্ধত ক্ষাঃ শচীভের্বদ্যানাম্।
শুষ্ণং পরিপ্রদিক্ষণিদ্ বিশ্বায়বে নিশ্বিশ্নথঃ।।
(ঋগ্বেদ ১০.২২.১৪)

সরলার্থ: যদিও পৃথিবী হস্তপদহীন তবুও ইহা চলিতেছে। অবশ্যই জ্ঞাতব্য পরমাণু শক্তি দ্বারা সূর্যের চারদিকে ইহা প্রদক্ষিণ করিতেছে।
হে পরমাত্মন্! সমগ্র মানবের মধ্যে আস্তিক্যবোধ জাগাবার জন্যই তুমি এইরূপ রচনা করিয়াছো ।

এখনে প্রশ্ন আসতে পারে, তাহলে সূর্য কী একস্থানেই অবস্থান করে? সূর্য তো নিজ গ্যালাক্সিকে প্রদক্ষিণ করে।

তাহলে দেখে নেওয়া যাক এ বিষয়ে বেদের বর্ণনা :

সবিতা যন্ত্রৈঃ পৃথিবীমরভ্নাদস্কম্ভনে সবিতা দ্যামদৃংহৎ।
অশ্বমীবাধুক্ষদ্ধু-নিমন্তরিক্ষমতূর্তে বন্ধং সবিতা সমূদ্রম্।।
(ঋগ্বেদ ১০/১৪৯/১)

সরলার্থ: সূর্য রজ্জুবৎ আকর্ষণ দ্বারা পৃথিবীকে বাঁধিয়া রাখিয়াছে। নিরাধার আকাশে দ্যূলোকের অন্যান্য গ্রহকেও ইহা সুদৃঢ় রাখিয়াছে।
অচ্ছেদ্য আকর্ষণ রজ্জুতে আবদ্ধ, গর্জনশীল, গ্রহসমূহ নিরাধার আকাশে অশ্বের ন্যায় পরিভ্রমণ করিতেছে।

আকৃষ্ণেন রজসা বর্তমানো নিবেশয়ন্নমৃতং মর্তঞ্চ।
হিরণ্ময়েন সবিতা রথেনা দেবো যাতি ভুবনানি পশ্যন্।।

(ঋগ্বেদ ১/৩৫/২)
(যজুর্বেদ ৩৩/৪৩)

সরলার্থ:- সূর্য আকর্ষনযুক্ত পৃথিব্যাদি লোক লোকান্তরকে সঙ্গে রাখিয়া নশ্বর অবিনশ্বর উভয় পদার্থকে নিজ নিজ কার্য্যে নিযুক্ত রাখিয়া এবং মাধ্যাকর্ষন স্বরূপ রথে চড়িয়া যেন সারা লোকান্তরকে দেখিতে দেখিতে গমন করিতেছে।

বিজ্ঞান সম্প্রতি প্রমাণ করেছে, চাঁদের নিজস্ব আলো নেই এবং চাঁদ সূর্যের আলো প্রতিফলিত করে।
এই বিষয়ে এবং সূর্যগ্রহণ সম্পর্কে বেদের বর্ণনায় কি উল্লেখ করা রয়েছে, দেখে নিই!

অত্রাহ গোরমন্বত নাম ত্বষ্টুরপীচ্যম্ ।
ইত্থা চন্দ্রমসো গৃহে।
(ঋগ্বেদ ১/৮৪/১৫)

সরলার্থ: গমনশীল চন্দ্রলোকে সূর্য্যের উজ্জ্বল জ্যোতি প্রতিফলিত হয় এইরূপ মানা হয়।

যত্ ত্বা সূর্য স্বর্ভানু স্তমসাবিধ্যদাসুরঃ।
অক্ষেত্রবিদ্ যথা মুগ্ধো ভুবনান্যদীধয়ুঃ।।
(ঋগবেদ ৫.৪০.৫)

সরলার্থ: হে সূর্য যাকে তুমি তোমার নিজ আলো উপহার স্বরূপ প্রদান করেছ (চাঁদ), তাঁর দ্বারা যখন তুমি আচ্ছাদিত হয়ে যাও, তখন আকস্মিক অন্ধকারে পৃথিবী ভীত হয়ে যায়।

এখানে স্পষ্টতই চাঁদের যে নিজস্ব কোনো আলো নেই, চাঁদ যে সূর্যের রশ্মি প্রতিফলিত করে সেটা বলা হয়েছে । শুধু তাই নয় চন্দ্রগ্রহণ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রয়েছে।

এখন সর্বশেষ আরেকটি আশঙ্কা থেকে যায়। পৃথিবী এবং সূর্য তো আপেক্ষিকভাবে তার নিজস্ব কক্ষপথে স্থিতই রয়েছে। তাহলে বেদ সেই বিষয়ে কী বলে!

অস্থাদ্ দৌরস্থাৎ পৃথিব্যস্থাদ্ বিশ্বমিদং জগৎ ।
আস্থু্র্বৃক্ষা ঊর্ধ্বস্বপ্নাস্তিষ্ঠাদ্ রোগে তব।
(অথর্ববেদ ৬/৪৪/১)

সরলার্থ: এই সৌরজগৎ দৃঢ় ও নির্বিঘ্নে স্থিত আছে । এই পৃথিবী দৃঢ়, স্থির ও নির্বিঘ্নে স্থিত আছে। সমগ্র এই বিশ্বজগৎ দৃঢ় ও অবিক্ষুব্ধ রয়েছে।

উপরের দিকে দাঁড়িয়ে বিশ্রামকারী বৃক্ষসমূহও নিশ্চলভাবে স্থিত। এভাবে এই রোগও স্থিত অর্থাৎ নিবৃত হয়ে যাক, এটা অবশ্যই যেনো তীব্রতর না হয়।

এখানে স্পষ্ট বোঝানো হয়েছে যে, পৃথিবী ও অন্যসকল গ্রহ, উপগ্রহ, নক্ষত্রসমূহ নিজ কক্ষপথে স্থির থাকায় এই বিশ্বজগৎ নির্বিঘ্ন রয়েছে।

তাছাড়া এই মন্ত্রে আপেক্ষিকতা তত্ত্বও পাওয়া যায় ।
বেদের এরকম অসংখ্য মন্ত্র রয়েছে মহাবিশ্বের বিজ্ঞান সম্পর্কে যা লিখে শেষ করা যথেষ্ট কঠিন।

ঋগ্বেদের স্বীকৃতি ইউনেস্কো পযর্ন্ত দিয়েছে, দেখুন!

এবার জেনে নিই বিজ্ঞানের এসব তথ‍্যের সর্বপ্রথম আবিস্কারক কে…!

বৈদিক সভ্যতা :

সামবেদ : সঙ্গীতের উৎপত্তি

পৃথিবীতে প্রথম গান/সঙ্গীতের সৃষ্টি হয় পবিত্র সামবেদ থেকে। ‘সাম’ শব্দের অর্থ ‘সংগীত’।
সামবেদে মন্ত্রের মাধ্যমে ঈশ্বরের স্তুতি করা হয়। গানের ছন্দে, সুরের মাধ্যমে সামবেদের মন্ত্রগুলো উচ্চারণ করা হয়।

যজুর্বেদ : ভূমি পরিমাপ বিদ‍্যার উৎপত্তি

পৃথিবীতে প্রথম ভূমি পরিমাপ বিদ্যার উৎপত্তি হয়েছে যজুর্বেদ থেকে। যজুর্বেদ মূলত যজ্ঞ সংক্রান্ত শাস্ত্র। নির্দিষ্ট পরিমাণ ভূমি পরিমাপ করে যজ্ঞকুন্ড / যজ্ঞবেদী তৈরী করতে হয়।

ভূমির এই পরিমাপ পদ্ধতি থেকেই আধুনিক জ্যামিতি শব্দটি এসেছে। সংস্কৃত শব্দ ‘জ্যা’ অর্থ ভূমি এবং ‘মিতি’ অর্থ পরিমাপ।

অথর্ববেদ : চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক

সর্বপ্রথম চিকিৎসা শাস্ত্রের উৎপত্তি অথর্ববেদ থেকে। অথর্ববেদের কল‍্যাণে প্রাচীন মুনি ঋষিগণ, মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর চিকিৎসা করার পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন।

সর্বপ্রথম বিদ‍্যুতের আবিস্কারক: ঋষি অগস্ত‍্য

বেদের আলোতে আলোকময় সনাতন ধর্মের অন‍্যতম প্রধান একজন মুনি অগস্ত্য। পৌরণিক গ্রন্থে পাওয়া যায়, ভয়ংকর মায়াবী দানব ইল্বল ও বাতাপী বধ,
সাগরে লুকিয়ে থাকা অত‍্যাচারী দানব বধে দেবতাদের সহায়তার জন‍্য সুমদ্রের জল পান করেছেন; প্রকৃতপক্ষে তাঁর বাস্তব জীবন ও বিস্ময়কর ঘটনাসমৃদ্ধ!

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এই মুনি সম্পর্কে চমকে যাওয়ার মত সবচেয়ে বড় তথ্য হচ্ছে, তিনিই সর্বপ্রথম আধুনিক বৈদ‍্যুতিক শক্তির ধারণা দিয়েছিলেন!

আজ থেকে হাজার বছর পূর্বে কিভাবে তিনি বিদ‍্যুতের ধারণা দিয়েছিলেন এই বিষয়ে তাঁর রচিত,
অগস্ত্য সংহিতার একটি শ্লোক –

সংস্থপ্য মৃন্ময় পাত্রে তাম্রপাত্রম সুসংস্কৃতম
ছদ্যে শিখিগ্রিবেন ছরদ্রভিহ কাষ্ঠপমসুভিহ।

অনুবাদ:- একটি মৃত্তিকাপাত্র নাও, তাতে একটি তামার শীট দাও এবং একটি শিখগ্রীবা স্থাপন কর।
এতে কাষ্ঠগুড়ো, দস্তা এবং পারদ ছিটিয়ে দাও, এরপর সেখানে তার সংযুক্ত করলে তুমি মিত্রবরুনশক্তি পাবে।

বিজ্ঞানীদের কাছে এই শ্লোকের মধ‍্যে শিখগ্রীবা শব্দটি সমস্যা ছিল।
কারণ, এই শব্দের অর্থ হচ্ছে ময়ূরের ঘাড়।
কিন্তু এটায় তো মিত্রবরুণ শক্তি তথা বিদ্যুৎ পাওয়া অসম্ভব।

অবশেষে অনেক চেষ্টার পরে, শিখগ্রীবা শব্দটির প্রকৃত অর্থ বুঝতে পারেন বিজ্ঞানীরা।
প্রকতপক্ষে শিগগ্রীবা হচ্ছে ময়ূরের ঘাড়ের রঙের একটি রাসায়নিক পদার্থ, বৈজ্ঞানিক ভাষায় যে বস্তু কপার সালফেট নামে পরিচিত।

অগস্ত্য সংহিতার এই শ্লোকের মাধ্যমে বৈদ‍্যুতিক শক্তির যে ব্যাটারি তৈরি হয়, সেটা ডিজিটাল মাল্টিমিটারে মেপে দেখা যায় Open circuit voltage 1.38Volt এবং Free circuit current of 23 Milli Ampier প্রদান করে।

অগস্ত্য সংহিতার পরবর্তী শ্লোকটি ছিল –

আনেন জলভগ্নোস্তি প্রান দানেসু বায়েসু
ইবম শতনম কুম্ভনমসয়োগকারী অকৃতস্মৃতহ।

অনুবাদ:- যদি এরুপ একশটি মৃত্তিকাপাত্রের শক্তি আমরা ব্যবহার করি তবে জল প্রানদানকারী অক্সিজেন ও ভাসমান হাইড্রোজেন এ বিভক্ত হবে। আধুনিক বিজ্ঞানের কারণে আমরা জানি যে জলে তড়িৎ চালনা করলে তা অক্সিজেন ও হাইড্রোজেন এ বিভক্ত হয়!

পরবর্তী শ্লোকে উল্লেখ করা হয়েছে-

বায়ুবন্ধকবস্ত্রেন নিবদ্ধ য়েনমস্তকে
উদান স্বলঘুত্বে বিভর্তকষ্যয়ন্কম।

অনুবাদ:- হাইড্রোজেনকে বায়ুনিরোধী কাপড়ে বন্দী করলে তাকে আকাশে উড্ডয়ন সম্ভব!

আজ থেকে হাজার হাজার বছর আগে সনাতন ধর্মের এই মহান জ্ঞানী ঋষি যেসব বৈজ্ঞানিক সুত্র লিখে গেছেন তাঁর রচিত অগস্ত্য সংহিতায়,
সেইসব সুত্রগুলো প্রমাণ করে দেয়-
প্রাচীন ভারতবর্ষে ব‍েদের আলোতে দীপ্তমান এসব মুনিঋষি দের মাধ্যমে পৃথিবীতে সর্বপ্রথম বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও বৈজ্ঞানিক আবিস্কারের সৃষ্টি হয়েছিল।

অণু পরমাণু বিজ্ঞানের জনক : মহর্ষি কণাদ

প্রাচীন ইতিহাসের দিকে নজর দিলে আমরা জানতে পারি, অণু ও পরমাণু বিজ্ঞানের প্রথম আবিষ্কারক মহর্ষি কণাদ।
পদার্থের সবচেয়ে ক্ষুদ্র অংশ, যেটা কণা নামে আমাদের কাছে পরিচিত; এই কণা নাম মহর্ষি কণাদ থেকেই সৃষ্ট। ৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ঋষি কণাদ পারমাণবিক তত্ব আবিষ্কার করেছিলেন।

তাঁর রচিত “বৈশেষিক দর্শন” গ্রন্থে তিনি সর্বপ্রথম অণু, পরমাণু, রাসায়নিক বিক্রিয়া ও পরমাণুর গতি সম্পর্কে ধারণা দেন। উল্লেখ্য, ১০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মহান ঋষি নাগার্জুন রাসায়নিক বিজ্ঞান আবিষ্কার করেন।

গণিত ও জ‍্যোর্তি বিজ্ঞানের জনক : মহর্ষি আর্যভট্ট এবং বরাহমিহির

৪৭৬ – ৫৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে বিখ্যাত মহান ভারতীয় ঋষি আর্যভট্ট, গণিত ও জ্যোর্তিবিজ্ঞান আবিষ্কার করেন।
বিশ্বের সর্বপ্রথম গণিতের “পাই” আবিষ্কার ও তিনি করেছিলেন। সর্বপ্রথম শূণ্য সংখ্যার সর্বপ্রথম আবিষ্কার করেছিলেন তিনি।

তিনি বেদ থেকে শূণ্য সংখ্যার আবিষ্কার করেন। এছাড়া শুক্ল যজুর্বেদের ১৭ অধ্যায়ের ২নং শ্লোকে শূণ্য সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

পৃথিবীতে তিনিই প্রথম মহাকর্ষ শক্তি সম্পর্কে ধারণা দেন। তাঁর রচিত “সূর্যসিদ্ধান্ত” নামক বিখ্যাত গ্রন্থে তিনি এর পূর্ণাঙ্গ ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
আধুনিক বিজ্ঞানে জ্যোতিবিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা শুরু হয়েছে ১৭ শতকে।

কিন্তু এই গবেষণা শুরুর ১৫০০ বছর পূর্বে ঋষি ও মহান বিজ্ঞানী বরাহমিহিরের রচিত পঞ্চসিন্ধাতিকা গ্রন্থ আমাদের অবাক করে দেয়!

জ্যোতিবিজ্ঞান এবং আবহাওয়াবিদ্যা নিয়ে তিনি গবেষণালব্ধ যেসব মতবাদ দিয়েছেন, বর্তমানের আধুনিক প্রযুক্তি দিয়েও এসব ব্যাখ্যা করা অত্যন্ত কঠিন।

প্রাচীন ভারতের ৫ম শতাব্দীর একজন জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও গণিতবিদও ছিলেন বরাহমিহির। বর্তমান ভারতের মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িনী নগরে ৫০৫ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন তিনি

প্রথম জ‍্যামিতির জনক :

গণিতশাস্ত্রে তাঁর অসংখ্য অবদানের মধ্যে অন‍্যতম একটি অবদান হল, ত্রিকোণমিতির ধারণা দেওয়া।
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় পাওয়া যায়, বরাহমিহির তাঁর লেখায় মঙ্গল গ্রহে জল ও লোহার অস্তিত্বের কথা বলেছিলেন।

জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ে তাঁর রচিত অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রধান গ্রন্থ পঞ্চসিদ্ধান্তিকা। এই মহামূল‍্যবান গ্রন্থের একটি অংশের নাম ‘সূর্যসিদ্ধান্ত’।

সূ্র্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণের ব্যাখ্যা সহ বিভিন্ন গ্রহের আনুমানিক পরিধি পরিমাপ করেছিলেন বরাহমিহির। মঙ্গলের পরিধি গণনায় মাত্র ১১ শতাংশ ত্রুটি ছিল বরাহমিহিরের।

সাম্প্রতিক সময়ে নাসার প্রেরণ করা মঙ্গলযান মঙ্গল গ্রহ থেকে যেসব তথ্য সংগ্রহ করে তা থেকে জানা যায়, বরাহমিহিরের দু’টি সিদ্ধান্তই ছিল নির্ভুল।

গণিতশাস্ত্রের আবিষ্কারক : ঋষি ভাস্করাচার্য

P. P. Divakaran তাঁর রচিত ‘The Mathematics of India” নামক গ্রন্থে ভারতীয়দের গণিতচর্চার তিনটি কাল নির্ণয় করে বর্ণনা করেছেন।

M.S Narasiman সহ বিখ্যাত গণিত ইতিহাস প্রণেতাগণ প্রাপ্ত তথ্য, উপাত্ত, প্রমাণের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে মত প্রকাশ করেন-
বিশ্বের প্রথম পাটিগণিত ও বীজগাণিত ধারণার উৎপত্তি এবং বর্তমান উন্নতির জন‍্য মানবসভ্যতা প্রাচীন ভারতবর্ষের নিকট ঋণী।

যীশু খ্রীষ্ট এবং বুদ্ধের জন্মের বহু পূর্বেই ভারতবর্ষ সংখ্যার ব্যবহার জানত। Sir Edwin Arnold তাঁর লিখিত “The Light of Asia’ গ্রন্থে এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন

Smith এবং Karpinski একই দাবী তুলে ধরেছেন।
Smith এবং Karpinsk দশম শতকের শেষের সময় থেকে পরবর্তী সময়ে বেশকিছু আরবীয় এবং ইউরোপীয় গ্রন্থকারের ঐতিহাসিক নথির ও পুরোনো নির্ভরযোগ‍্য তথ‍্যের ভিত্তিতে দাবী করেছেন,
বর্তমানের আধুনিক পাটিগণিত প্রাচীন ভারতীয় গণিতজ্ঞদের উদ্ভাবনী ভাবনার ফল।

আরবীয় এবং ইউরোপীয়গণ সেই জ্ঞানের মাধ্যমে সমৃদ্ধ হয়। প্রাচীন ভারতীয় গণিতবিদ্যা,
ইউরোপে বিস্তারের মূল যোগসূত্র ছিলেন আরবীয় গণিতজ্ঞ Musa, বেশকিছু দেশী/বিদেশী শাস্ত্রবিশারদ ও গণিতজ্ঞগণ তথ‍্য/প্রমাণ বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন-
প্রাচীন গ্রীক দার্শনিক ও গণিতজ্ঞ পীথাগরাসের গাণিতিক ভাবনা. পীথাগরাসের জন্মের বহু সময় পূর্বেই ভারতে বিদ্যমান ছিল।

ফরাসি গবেষক ফরাসি গবেষক Georges Ifrah এই বিষয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করে সহমত প্রদান করেছেন।

অন‍্যতম বিখ্যাত গণিত বিশারদ Sir John Herschel তাঁর রচিত “Mathematics” প্রবন্ধে এই বিষয়ে আলোচনা করেছিলেন।

Herschel এর রচিত এই প্রবন্ধ David Brewster’s Edinburgh Encyclopedia (Philadelphia, 1832) -তে প্রকাশিত হয়েছিল।

আলোচিত এই প্রবন্ধের একটি সারসংক্ষেপ পরবর্তীতে A. J. Edmunds এর মাধ্যমে বিখ্যাত জার্নাল ‘The Monist’, April, 1915 তে প্রকাশিত করা হয়েছিল।

১১১৪ – ১১৮৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে বিখ্যাত পণ্ডিত ও ঋষি ভাস্করাচার্য পৃথিবীর প্রথম “গণিতশাস্ত্র” আবিষ্কার করেন এবং ১১১৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দে তিনি সর্বপ্রথম গণিতের পূর্ণাঙ্গ ব্যাখ্যা করেন।

তাঁর রচিত “লীলাবতী ও বীজগণিত” গ্রন্থে এই বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ করেছেন। তিনিই প্রথম ধারণা দেন, “পৃথিবী গোলাকার”।

প্রথম ক‍্যালকুলাস আবিস্কার :

ঈশা ঊপানিষদে অসীম শব্দের সুন্দর একটি ব‍্যাখ‍্যা আছে। ক্যালকুলাস এর সাথে অসীম শব্দের সম্পর্ক থাকার কারণে, এই ব‍্যাখ‍্যা দিয়েই শুরু!

“ওঁ পূর্ণম আধাহ পূর্ণমিদং পূর্ণাৎ পূর্ণমুদচ্যতে
পূর্ণস্য পূর্ণমাদায় পূর্ণমেব্যবশিষ্যতে” ( উপনিষদ)

এর অর্থ : “That is Whole; this is Whole; From the Whole the Whole becomes manifest. From the Whole, when the Whole is negated what remains is again the Whole – Chinmayananda Saraswati “

স্বামী বিবেকানন্দের ভাষায়- The infinite is there; the infinite is that, if you take infinite from infinity, the infinite only remains.

প্রথম ক‍্যালকুলাস আবিস্কার নিয়ে সপ্তদশ শতাব্দীতে আইজাক নিউটন এবং গটফ্রিড লিবনিজ, এই দুইজনের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি হয়েছিল।
ইতিহাসে এই বিবাদ
পরিচিত, লিবনিজ ও নিউটনের ক্যালকুলাস বিবাদ নামে।

বর্তমান সময়ে গ্রহণযোগ্য মতবাদ, নিউটন এবং লিবনিজ স্বাধীনভাবে ক্যালকুলাস আবিষ্কার করেন।

কক্ষপথে আবর্তনশীল গ্রহের গতি নিয়ে নিউটন যখন গবেষণা করছিলেন, তখন তিনি গতিশীল বস্তুর তাৎক্ষনিক গতি পরিবর্তনের হার বের করতে গিয়ে তিনি প্রথম ডেরিভেটিভ এর ধারণা দেন।

নিউটনের দাবী অনুযায়ী, ১৬৬৬ সালে তিনি ক্যালকুলাস আবিষ্কার করেছেন। মূলত “ফ্লাক্সিয়ন এবং ফ্লুয়েন্টের পদ্ধতি” তার আবিষ্কৃত ক্যালকুলাস ছিল। ইন্টারনেটে খুব সহজেই “ফ্লাক্সিয়ন এবং ফ্লুয়েন্টের পদ্ধতি” সম্পর্কে জানা যায়।

১৬৬৬ সালের কিছু সময় পরে তিনি, প্রথমবার এই পদ্ধতির বিবরণ গবেষণাপত্র রুপে প্রকাশিত করেন।

অন‍্যদিকে ১৬৭৪ সালে লিবনিজ অসীম সিরিজের সঙ্কলনের generalization থেকে প্রথম ইন্টিগ্রেশন এর ধারণা দেন এবং ১৬৮৪ সালে গবেষণাপত্র আকারে এবং ১৬৯৬ সালে ক্যালকুলাস বিষয়ে একটি লেখা প্রকাশ করেন।

নিউটন ক্যালকুলাসের কিছু অংশ ১৬৯৩ সালে এবং ১৭০৪ সালে সম্পূর্ণরুপে প্রকাশ করেন।

কিন্তু সমস্যা হয় ১৬৭৬ সালে লিবনিজ, লন্ডন ভ্রমণের সময় নিউটনের একটি অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপি দেখেছিলেন।

তাই প্রশ্ন উঠে আসে, লিবনিজ কি নিউটনের ধারণার উপর ভিত্তি করে ক্যালকুলাসের উন্নয়ন করেছিলেন? যদিও গবেষণাপত্র আগে লিবনিজ প্রকাশিত করেছিলেন, তাই লিবনিজ আবার নিউটন কে দোষারপ করেছেন।

এই প্রশ্ন থেকেই সূচনা হয় একটি দীর্ঘ বিবাদের! প্রথম কে আগে ক্যালকুলাস আবিষ্কার করেছিলেন? ১৬৯৯ সাল থেকে শুরু হয়ে হয়ে এই বিবাদ কয়েক দশক চলেছিল।

তাহলে সর্বপ্রথম কে বা কারা ক্যালকুলাস আবিষ্কার করেছিল, এই বিষয় নিয়ে কৌতূহল থেকেই যায়!
ক্যালকুলাসকে কলন বিদ্যা বলা হত প্রাচীন ভারতে।

ল্যাটিন ভাষা থেকে ইংরেজী ক্যালকুলাস শব্দটির উৎপত্তি যার অর্থ “নুড়িপাথর”।
চতুর্দশ শতাব্দীতে “যুক্তিভাস” গ্রন্থে জেষ্ঠদেব কলন বিদ্যার বর্ণনা দিয়েছিলেন। প্রকৃতপক্ষে এই কলনবিদ্যার আবিস্কার তারও পূর্বে।

১১১৪ খ্রিস্টাব্দে কর্ণাটকের প্রদেশের বিজাপুরে জন্মগ্রহণ করা ভাস্করাচার্য
নামের একজন ভারতীয় গণিতবিদ এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানী, নিউটন-লিবনিজ এর প্রায় ৫০০ বছর পূর্বে “ক্যালকুলাস” আবিষ্কার করেছিলেন।

গণিত এবং জ্যোতিষ এই দুটি বিষয়ে তাঁর অসাধারণ জ্ঞান ছিল। দেশের রাজা থেকে শুরু করে দূরের দেশের সাধারণ মানুষ সহ সকলেই তাঁকে শ্রদ্ধা করত।

১১৫০ খ্রিস্টাব্দে বিধবা কন্যা লীলাবতীকে বিদ্যাশিক্ষা দিতে গিয়ে ভাস্করাচার্য রচনা করেন গণিত শাস্ত্রের একটি অমূল্যবান এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানে একটি শাস্ত্রীয় পাঠ্য গ্রন্থ সিদ্ধান্ত-শিরোমণি।

পাটিগণিত, বীজগণিত, গ্রহ গণিতাধ্যায় ও গোলধ্যায় জ্যোতির্বিজ্ঞান; এই চার ভাগে বিভক্ত গ্রন্থটি প্রাচীন তথ‍্য প্রমাণ অনুযায়ী ভাস্করাচার্য ডিফারেন্সিয়াল ক্যালকুলাসের কিছু ধারণার সাথে অনেক পরিচিত ছিল।

ডিফারেন্সিয়াল ক্যালকুলাসের অনেক গভীরে চলে গিয়েছিলেন। ফাংশনের একটি extremum value এর জন্য ডিফারেন্সিয়াল সহগ যে বিলুপ্তি হয়ে যায়।
এই সম্পর্কে তিনি ধারণা দিয়েছিলেন, যেটা infinitesimals -এর ধারণাকে নির্দেশ প্রদান করে।

তিনি তার রচিত সিদ্ধান্ত শিরোমণি গ্রন্থে গ্রহ গণিতাধ্যায় অংশে ক্যালকুলাসের ডিফারেন্সিয়েসন ব্যবহার করেছিলেন। গ্রহের গতি বুঝাতে তিনি দুই রকম গতির কথা বলেছেন, স্থূল গতি ও সূক্ষ্ম গতি।

স্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে যে, তিনি সূক্ষ্ম গতি বা তাৎক্ষণিক গতি নির্ণয় করেন ডিফারেন্সিয়েশন করে।
ভাস্করাচার্য সর্বপ্রথম অসীম এর ধারণা দিয়েছিলেন।

তিনি উল্লেখ করেছেন, যদি কোন সসীম সংখ্যাকে ০ দিয়ে ভাগ করা হয় তাহলে তার ফলাফল অসীম হবে।”

এক সেকেন্ড সময়কে তিনি ৩৩৭৫০ ভাগে বিভক্ত করে ত্রুটি নাম দিয়েছিলেন।
তিনি গোলকের তলের পরিমাণ ও আয়তন নির্ণয় করতে গিয়ে গোলকটিকে ছোট ছোট করে ভাগ করে নিয়েছেন ও পরে যোগ করেছেন।
এই বিষয়টা বর্তমানে আবিষ্কৃত ইন্টিগ্র্যাল ক্যালকুলাসকে নির্দেশ করে।

নিউটনের প্রায় ৫০০ বছর পূর্বে ১১৫০ সালে ‘সিদ্ধান্ত শিরোমণি’ গ্রন্থে তিনি মহাকর্ষ বা অভিকর্ষ নিয়ে আলোচনা করেছেন। তার রচিত এই গ্রন্থের একটি শ্লোকে আছে—

আকৃষ্টি শক্তিশ্চ মহীতয়া যৎ
খসৃং গুরু স্বাভিমুখং স্বশক্ত্যা
আকৃষ্যতে তৎ পততীবভাতি
সমে সমস্তাৎ ক্ক পতত্বিয়ং খে !!

অর্থাৎ, আকর্ষণ শক্তি সম্পন্ন পৃথিবী যখন উপরিস্থিত জড়বস্তুকে আপন শক্তির সাহায্যে নিজের দিকে আকর্ষন করে তখন মনে হয় যে এই সব বস্তু ভুপতিত হচ্ছে।

বিভিন্নমুখী শক্তির বলে মহাকাশে পৃথিবীর অবস্থান সুনির্দিষ্ট ।
ভাস্করাচার্য তার এই শ্লোকে দুটি কথা স্পষ্টভাবে বোঝাতে চেয়েছেন–
প্রথমত, পৃথিবীর আকর্ষন বল আছে এবং সে সমস্ত উপরিস্থিত বস্তুকে নিজের দিকে টানছে বলেই সেই সব আকর্ষিত বস্তু মাটিতে পড়ছে বলে মনে হয়।

দ্বিতীয়ত, বিভিন্নমুখী শক্তি বলতে ব্রহ্মাণ্ডের বিভিন্ন পদার্থের আকর্ষন বলের কথা বলা হয়েছে এবং বলা হয়েছে, ব্রহ্মাণ্ডের বিভিন্ন পদার্থজাত আকর্ষন শক্তির বলে গ্রহ নক্ষত্রদের অবস্থান মহাকাশে অবিচ্যুত।

তাঁর রচিত গ্রন্থ থেকে আরেকটি শ্লোকের অনুবাদ-
পৃথিবী যদি দর্পণোদরের ন্যায় সমতল হইত, তবে তদুপরি বহু উচ্চে ভ্রমণশীল স্বৰ্য্য নিরন্তর মানবগণের দৃষ্টিগোচর হইত। অর্থাৎ, কখনই রাত্রি হইত না; গোল বলিয়াই দিবারাত্রি হইয়া থাকে।

আমেরিকান ইতিহাসবিদ Kim Leslie Plofker যিনি ভারতের একজন গণিত বিশেষজ্ঞ। ভারতের গণিতচর্চা নিয়ে গবেষণা করেন সংস্কৃত ভাষা শিখে “Mathematics in India” গ্রন্থ লিখে
গবেষক মহলে আলোরণ করেছিলেন।
তাঁর রচিত গ্রন্থে লিখেছেন, ক্যালকুলাসের উৎপত্তি ভারতে।

Kim Leslie Plofker বলেছেন-
ক্যালকুলাস বলতে যদি শুধু জটিল আকৃতির ক্ষেত্রফল কিংবা বিচিত্র বস্তুর আয়তন বের করার পদ্ধতি মনে করেন, তা হলে মানতে হবে সেটা পশ্চিমা দেশের আবিস্কার।

কিন্তু ক্যালকুলাসের উৎস সেটা হতে পারে না। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পরিমাণ বা সংখ্যা ভাবনাও তো আমাদের ক্যালকুলাসের দিকে নিয়ে যায়।
সেই চিন্তা ভারতে হয়েছিল সপ্তম শতাব্দীতে, যখন পশ্চিমা দেশে ক্যালকুলাসের বিষয়ে অজানা ছিল।

চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক : ঋষি সুশ্রুত ও ঋষি চরক

৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ঋষি সুশ্রুত অস্ত্রোপচার, কসমেটিক সার্জারি ও প্লাষ্টিক সার্জারি আবিস্কার করেন।
তাঁর আবিস্কার করা পদ্ধতিতে দুই হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে অস্ত্রোপচার করা হত ভারত ও আরব বিশ্বে।

মহর্ষি সুশ্রুত ছিলেন অস্ত্রোপচারের জনক। তাঁর রচিত সুশ্রত সংহিতা গ্রন্থে ৩০০+ অস্ত্রোপচারের যন্ত্রপাতির বর্ণনা ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে।

তিনি বিস্তারিত উল্লেখ্য করেছেন। প্রায় ১৫০০ – ১৬০০ বছর পূর্বের এই ঘটনা ভূলে গিয়ে আজ আমরা অস্ত্রোপচারের জনক হিসাবে জানি জন হান্টারকে।

ঋষি চরক আবিষ্কার করেন ঔষধ ও শল্যবিদ্যা। তাঁর রচিত “চরক সংহিতা” গ্রন্থে এই চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে।

আবহওয়া ও কৃষি বিজ্ঞানের স্রষ্টা : বিদুষী খনা

রাজা বিক্রমাদিত্যের রাজসভার নবরত্নদের মধ্যে অন্যতম পণ্ডিত মিহিরের স্ত্রী এবং পণ্ডিত বরাহের পূত্রবধূ ছিলেন বিদুষী খনা।

তিনি গণনা করে আগেই আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিতে পারতেন এবং জমিতে কখন কিভাবে বীজ বপন করলে ভালো ফসল হবে সেটাও বলতে পারতেন।

এছাড়াও তিনি জ্যোতিষ শাস্ত্রে পণ্ডিত বরাহ ও মিহিরের থেকেও বেশি জ্ঞানী ছিলেন। মহারাজ বিক্রমাদিত‍্য, তাঁর এই গুণের জন্য তাঁকে রাজসভার দশম রত্ন হিসেবে ভূষিত করেন।

বিদুষী খনার রচিত “খনার বচন” গ্রন্থ বিখ্যাত হয়ে আছে আজও কারণ, এই গ্রন্থের উক্তি কখনোই ব্যার্থ হয় না।

মহাশূন্য ও বিমানের জনক : মহর্ষি ভরদ্বাজ

আকাশে উড়ন্ত রথের বিষয়ে অনেক আলোচনা হয়। বেশিরভাগ সনাতনীদের বিশ্বাস এই রথ আকাশে উড়ত দিব্যশক্তিতে।

মহাভারতের যুদ্ধে একজন গুরুত্বপূর্ণ যোদ্ধা এবং কুরু ও পাণ্ডবদের অস্ত্রগুরু ছিলেন দ্রোণাচার্য।
তার পিতা ছিলেন বিখ‍্যাত মহান ঋষি ভরদ্বাজ।

৩৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে প্রাচীন ভারতের এই মহান ঋষি ভরদ্বাজ বিমান ও বিমান সম্পর্কিত উড়ন্ত প্রযুক্তির আবিষ্কার করেন।

পৃথিবীতে তিনি সর্বপ্রথম বিমান তৈরির পথপ্রদর্শক। তাঁর লিখিত “যন্ত্র সর্বস্ব” গ্রন্থে বিভিন্নভাবে বিমান তৈরি, বৈমানিক প্রযুক্তি, আকাশে / মহাকাশে উড়ানো, বিমানের মাধ্যমে মহাকাশে গমন ও উড়ন্ত যন্ত্র সম্পর্কে বিস্তারিত ব‍্যাখ‍্যা করেছেন।

প্রাচীন ভারতবর্ষের এসব বিমান নিয়ে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া গবেষণা করেছিল, দেখুন ভিডিও।

এই ‘যন্ত্র সর্বস্ব’ গ্রন্থের একটি অংশকে আলাদা করে ‘বৃহৎ বিমানাশাস্ত্র’ নামে একটি গ্রন্থের রূপ দেওয়া হয়েছে।

মহান ঋষি ভরদ্বাজ তাঁর বিমানাশাস্ত্র গ্রন্থে কয়েক রকম বিমানের গঠন, প্রযুক্তি এবং জ্বালানি সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন।

ভারতের একজন নারী বিমান বিজ্ঞানী নাসার প্রচলিত নিয়ম উপেক্ষা করে মহান ঋষি ভরদ্বাজ রচিত বিমানাশাস্ত্র থেকে একটি বিমান তৈরির কাজ শুরু করেছেন, দেখুন!

এই প্রাচীন গ্রন্থে উল্লেখিত আকাশে উড়ন্ত তিনটি বিশেষ যন্ত্র সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল-

এগুলো হল –
১. মান্ত্রিক বিমান
২. তান্ত্রিক বিমান
৩. যান্ত্রিক বিমান

এরমধ্যে যান্ত্রিক বিমান চার প্রকার।
যথা-
১. রুক্ম বিমান
২. শকুন বিমান
৩. সুন্দর বিমান
৪. ত্রিপুর বিমান।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির জনক সনাতন ধর্ম :

বিমান ও প্রযুক্তি বিষয়ে এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে মহর্ষি ভরদ্বাজের “যন্ত্র সর্বস্ব” গ্রন্থ পড়ার অনুরোধ রইল।

যদিও এই গ্রন্থ রচনার পূর্বে ঋষি নারায়ণ, ঋষি শৌণক, ঋষি ধুণ্ডিনাথ ও ঋষি চাক্রায়নী বিমান সম্পর্কিত গ্রন্থ রচনা করেছিলেন।

কিন্তু মহান ঋষি ভরদ্বাজের “যন্ত্র সর্বস্ব” গ্রন্থে বিমান/উড়ন্ত বস্তু সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে এবং এই গ্রন্থ সর্বোচ্চ গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিল।

সৃষ্টিতত্বের আবিষ্কারক : মহর্ষি কপিল

৩০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে প্রাচীন ভারতের মহান ঋষি কপিল বিশ্বতত্ত্ব/সৃষ্টিতত্ত্বের আবিষ্কার করেছিলেন।
তাঁর স্বহস্তে লিখিত “সাংখ্য দর্শন” নামক গ্রন্থে তিনি এই সৃষ্টিতত্ব /বিশ্বতত্বের বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছেন।

অর্থশাস্ত্র ও নীতিশাস্ত্রের জনক : আচার্য্য চাণক্য

৩২৪ – ৩২১ খ্রিস্টপূর্বাব্দে পৃথিবীতে সর্বপ্রথম “অর্থশাস্ত্র” গ্রন্থ রচনা করেন মৌর্য সম্রাট চন্দ্রগুপ্তের গুরুদেব ও ইতিহাসে বিখ‍্যাত মহান পণ্ডিত আচার্য্য চাণক্য।

তাঁর লিখিত “অর্থশাস্ত্র” গ্রন্থ পৃথিবীর সর্বপ্রথম “অর্থ” বিষয়ক গ্রন্থ। ২০০০ বছরেরও বেশি সময় অতিবাহিত হলেও, অর্থশাস্ত্রের অনেক আলোচনা এখনো যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ এবং ভবিষ্যতেও এর গুরুত্ব অপরিসীম।

এই বিখ্যাত গ্রন্থকে একটি বিশ্বকোষ বললেও, হয়তো অনেক কম বলা হবে। এই গ্রন্থে দর্শনশাস্ত্র, নীতিশাস্ত্র, রাষ্ট্রনীতি, দেশের বাজেট ব্যবস্থা, আন্তর্জাতিক ও আভ্যন্তরীণ সম্পর্ক, সরকার ও রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি,
বাজার ব্যবস্থা, বাণিজ্যনীতি, সমরনীতি, খনিজ সম্পদের সঠিক ব্যবহার, পরিবেশ প্রকৃতি, চিকিৎসাশাস্ত্র, কৃষি
এবং রাষ্ট্র প্রধানের নীতি / রাষ্ট্র পরিচালনা সহ যেসব বিষয়ে জ্ঞান থাকা দরকার, এসব বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা
এই গ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে।
বর্তমানে পৃথিবীর অনেক বড় নামিদামী বিশ্ববিদ্যালয়েও এই গ্রন্থ পড়ানো হয়।

যোগ শাস্ত্রের রচয়িতা : ঋষি পতঞ্জলি

২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মহান ঋষি পতঞ্জলি সর্বপ্রথম “যোগ শাস্ত্র” প্রণয়ন করেন। তারঁ রচিত “যোগ দর্শন” গ্রন্থে তিনি এই যোগ ব‍্যায়াম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।

সর্বপ্রথম বিধ্বংসী যুদ্ধাস্ত্র ও আকাশ প্রতিরক্ষা ব‍্যাবস্থা :

মহাকাব‍্য মহাভারত গ্রন্থে দেখা যায়, কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ সহ কয়েকটি যুদ্ধে বেশকিছু আশ্চর্যজনক অস্ত্রের ব্যবহার হয়েছিল।

সেসব অস্ত্র আকাশে নিক্ষেপ করার পরে, আবার সেই অস্ত্র আকাশেই নিস্ক্রিয় করা যেত। এই অস্ত্রগুলো বর্তমান যুগের বিধ্বংসী আণবিক অস্ত্রের মত।
আর প্রতিরক্ষা ব‍্যাবস্থা অনেকটা আয়রন ডোমের মত।

অস্ত্র নিক্ষেপ করে অসাধারণ এক প্রতিরক্ষাব্যূহ তৈরি করা হতো, যেখানে প্রতিপক্ষের নিক্ষেপ করে দেওয়া এক ঝাঁক অস্ত্র সেই প্রতিরক্ষা ব্যূহ ভেদ করতে পারতো না।
এর থেকেই স্পষ্ট, তৎকালীন যুদ্ধাস্ত্র ও প্রতিনরক্ষা ব‍্যাবস্থা নিঃসন্দেহে পৃথিবীর সর্বপ্রথম।

you like it.. রাণী ভবশঙ্করী

এখানে কেউ মতামত দিতে পারে, বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তি অনেক উন্নত এবং প্রাচীন ভারতের প্রযুক্তি শুধু রূপকথার গল্প, তাহলে প্রশ্ন হতে পারে, প্রাচীন এসব প্রযুক্তির ব্যাখ্যা বর্তমানের আধুনিক প্রযুক্তির স্থুল বিশ্লেষণে দেওয়া সম্ভব?

নিজেদের দেহ বেশকিছু সময় ভাসমান রাখতে পারে উত্তর আমেরিকার সামান জনগোষ্ঠী।
অপরদিকে, ভারতে এখনো বহু জনগোষ্ঠী আছে যারা যোগ ও সাধনার প্রভাবে লঘিমা সিদ্ধির মাধ্যমে এমন ক্রিয়া প্রতিনিয়ত প্রদর্শন করে যাচ্ছে।

এই জ্ঞান কয়েক সহস্র বছর ধরে তাঁদের পূর্ববর্তী প্রজন্মের মাধ্যমে পেয়েছে। হাজার হাজার বছর পূর্বে প্রাচীন ভারতে থাকা এই অমূল্য জ্ঞান কিভাবে আধুনিক প্রযুক্তি স্থুল বিশ্লেষণের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা যায়?

সর্বপ্রথম বিস্ময়কর স্থাপত্য :

এখন পযর্ন্ত পৃথিবীর সবচাইতে বৃহত্তম ও আশ্চর্যজনক মনোলিথিক স্ট্রাকচার কৈলাস মন্দিরের ব্লু প্রিন্ট বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এই কৈলাস মন্দির কর্ণাটকের ভিরুপাকশা মন্দিরের নকশা থেকে নির্মাণ করা হয়েছে।

কিন্তু বিস্ময়কর এই কৈলাশ মন্দির, পাহাড়ের চুড়া থেকে কয়েক লক্ষ টন পাথর কেটে অপসারিত করে একমাত্র মনোলিথিক স্ট্রাকচার তৈরি করা হয়েছে বৃহৎ আকারের মন্দিরটি!

কিভাবে কোন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে এই নকশা তৈরী করা হয়েছিল এবং কিভাবে এটা এক্সিকিউট করেছিল অথবা কি কৌশলে এই মন্দিরের নকশা অন্য একটি মন্দিরের সাথে হুবুহু মিল রেখে তৈরী করা হল?

এই অসম্ভবকে সম্ভব করা অবাক করার মত হলেও এটাই সত‍্য, ১২০০ বছর পূর্বে প্রাচীন ভারতে তৈরী করা এই অত‍্যাশ্চার্য স্থাপত‍্য!

আশ্চর্যজনক ও বিস্ময়কর এমন বহু স্থাপত্যের নিদর্শন নিয়ে প্রাচীন মন্দিরগুলো আজও প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে লুটেরাদের ভয়ংকর আঘাতে ক্ষত বিক্ষত হয়ে!

ভারতের অন‍্যতম আরেকটি বিস্ময়কর মন্দির, বৃহদাশ্বরা। এটা ভারতের সবচেয়ে উচু মন্দির।
এই মন্দিরের চূড়ায় ৮০ টন ওজনের গ্রানাইটের একটি কলস আছে। এখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে পারে, প্রায় ৬৬ মিটার উঁচুতে ৮০ টন ওজনের একটি গ্রানাইটের কলস কিভাবে স্থাপিত করা হয়েছিল?

এই প্রশ্নের উত্তরে আমরা বলতে পারি, এক্যুয়েস্টিক লেভিটেশন প্রযুক্তির ব্যবহার করে এই অসম্ভব কাজ সম্ভব করেছিল কয়েক হাজার বছর পূর্বে প্রাচীন ভারতের প্রযুক্তিবিদগণ।

প্রাচীন ভারতের মন্দিরগুলোতে এক্যুয়েস্টিক লেভিটেশন প্রযুক্তির সহ যেসব উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার হয়েছে, তার গবেষণালব্ধ প্রমাণ ইউটিউবের এই চ‍্যানেলে আছে।

আমরা জানি কম্পাস আবিস্কার হয় প্রায় ৭০০ – ৮০০ বছর পূর্বে, ইউরোপ মহাদেশে।
কিন্তু ভারতে ৯০০ বছরের পুরোনো অঙ্কোরভাট মন্দিরে প্রায় ৪০০ একর এলাকাজুড়ে নিখুঁত এলাইনমেন্ট করা হয়েছিল, যেখানে ০% ত্রুটি ছিল না?

বর্তমানে অত‍্যাধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়েও এই স্থাপত্য নির্মাণ করা প্রায় অসম্ভব।
কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, তৎকালীন সময়ে এই বিস্ময়কর অঙ্কোরভট মন্দিরে প্রধান কক্ষে সোলার প্যানেল থাকার সম্ভাবনা অথবা Crystal Quartz Radio frequency যন্ত্রের ব্যবহার হয়তো ছিল।

এই লিংকে দেখতে পারবেন, সনাতন ধর্মের অবতার শ্রীকৃষ্ণের দ্বারকা নগরী। যেটার অস্তিত্ব প্রত্নতত্ত্ববিদদের সমুদ্র অভিযানের মাধ্যমে প্রমাণিত।

সর্বপ্রথম ধানের চাষ :

প্রত্নতাত্ত্বিক বি.কে. থাপার ১৯৬০ থেকে ১৯৭০ এই দশক পযর্ন্ত ভারতবর্ষের উত্তরাঞ্চল আর বেলান (বিন্ধ মালভুমি, এলাহাবাদ, মির্জাপুর, রেওয়া, সিদ্ধি) উপত্যকায় কাজ করেন।

তৎকালীন সময় এই অঞ্চলে বেশকিছু প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান আবিস্কার হয়। এই অঞ্চল থেকে পাওয়া যায় ধানের তুষ।
পরবর্তীতে জি.আর. শর্মা মাটির ঐ স্তরের জীবাশ্মের কার্বন ডেটিং পরীক্ষার মাধ্যমে জানান, এই ধান চাষ করা হতো ৭ হাজার থেকে ৯ হাজার বৎসর পূর্বে।

এই অঞ্চল ব‍্যাতীত উত্তর প্রদেশও পাওয়া যায়, ৭ হাজার বছরের পুরোনো ধানের অস্তিত্ব। এর থেকে স্পষ্ট, সর্বপ্রথম ধানের চাষ ভারতের এই অঞ্চলে হয়েছিল।

তথ্যসূত্র :
১. Hindu Achievements in Exact Science: A Study in the History of Scientific Development – Binoy Kumar Sarkar, Longmans, Green And Co, New York & London, 1918
২. Hindu Mathematics, Mitra, The Modern Review Office, Calcutta, 1916

৩. History of Mathematics, F. Cajori, The Macmillan Company, New York, 1909,
৪. Progress of Physical Science, T. Thomson, New York, 1843.
৫. Algebra with Arithmetic and Mensuration, from the Sanskrit of Brahmagupta and Bhaskara – Henry T Colebrooke, London, 1817

৬. The Hindu – Arabic Numerals, D. E. Smith and L. C. Karpinski, Boston and London, Ginn and Company, Publishers, 1911
৭. History of Hindu Mathematics: A Source Book ” ( Part 1 & 2), Bibhutibhusan Datta and Avadesh Narayan Sing, Asia Publishing House, London, New York,, 1935(part -1), 1938(part -2)

৮. The Mathematics of India, P. P. Divakaran (Reviewd by M. S . Narasimhan, in Current Science, Vol.117, P: 309-311, Reprinted Azim Premji University at Right Angles, March, 2020

৯.. History of Science and Technology in India – Binod Bihari Sathpathy,
১০. ‘Sir John Herschel on Hindu Mathematics’ in The Monist – A. J. Edmunds, April, 1915, Vol. 25, No.2, P: 297-300, Oxford University Press

১১. ‘Ancient Indian Square Roots: An Exercise in Forensic Paleo-Mathematics’ , in The American Mathematical Monthly, – David H. Bailey Jonathan M. Borwein, October 2012

১২. The Greatest Mathematical Discovery – D. H.Bailey & J. M. Borwein, May, 2010 (This work was supported by the Director, Office of Computational and Technology Research, Division of Mathematical, Information and Computational Sciences of U. S. Department of Energy )

১৩. ডাঃ তুলশীরাম ভাষ্য বেদ
মহর্ষি দয়ানন্দ স্বরস্বতী ভাষ্য বেদ
বেদসার সংগ্রহ গ্রন্থ

১৪. আন্তর্জাতিক কয়েকটি গবেষণাধর্মী ওয়েবসাইট

 

4 thoughts on “বিজ্ঞানের সৃষ্টি বেদ থেকে | সনাতন ধর্ম ও বিজ্ঞান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *