ঋষিকা মৈত্রেয়ী প্রথম মহিলা দার্শনিক হিসাবে ভারতীয় ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছেন, ঋষি যাজ্ঞবল্ক্য ও মৈত্রেয়ীর ইতিহাস প্রাচীন ভারতের বৈদিক যুগের বিদ্যাগ্রহণ ও ধর্মাচরণের দ্বীপ্তিমান দৃ্রিস্তান্তমহাকাব্য ও বহু প্রাচীন গ্রন্থে বৈদিক যুগের যে সমস্ত নারী ঋষিদের বৈদিক দর্শন, জ্ঞানগরিমা, ধ্যান, ধারণা ও প্রজ্ঞার পরিচয় পাওয়া যায়,
তার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ঋষিকা মৈত্রেয়ীর নাম।
পন্ডিতদের মতে, ঋষিকা মৈত্রেয়ী মূলত একজন অদ্বৈত বেদান্ত দার্শনিক ছিলেন।
সনাতন ধর্মের প্রধান গ্রন্থ ঋগ্বেদে প্রায় ৩০ জন নারী ঋষিকার বর্ণনা আছে।
তৎকালীন চিকিৎসাবিদ্যার বিস্তারিত বিবরণ যেমন অথর্ববেদ থেকে পাওয়া যায় তেমনি,
এই ঋগ্বেদে তৎকালীন সমাজ তথা বৈদিক যুগের নারীশিক্ষার একটি সম্পূর্ণ চিত্র পাওয়া যায়।
গুণ ও বৈশিষ্ট্য বিষয়ক বহু কারণে, সনাতন ধর্মের প্রধান ধর্মগ্রন্থ বেদ শুধু ধর্মগ্রন্থ হিসেবেই নয়,
প্রাচীন ভারতবর্ষের রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজশাস্ত্র, সাহিত্য ও ইতিহাসের একটি পূর্ণাঙ্গ দলিল হিসেবে সমাদৃত।
চিন্তন ও জ্ঞানগরিমায় প্রজ্ঞাবতী বৈদিকযুগের নারী : ঋষিকা মৈত্রেয়ী
বৈদিক যুগের মাতৃকাগণদের জ্ঞান, বুদ্ধি এবং আধ্যাত্মিক সফলতা বিশেষরুপে দ্বীপ্তিমান।
বৈদিক যুগের প্রথম সময়ে নারীদের বিদ্যাগ্রহণ ও ধর্মাচরণের গৌরবময় ইতিহাস আজও উজ্জ্বল!
তৎকালীন সময় নারীগণ মূলত দুই ভাগের বিদ্যার্থিনী ছিল।
এক ভাগ ব্রহ্মবাদিনী, আর এক ভাগ সন্ন্যাসিনী।
বৈদিক যুগের ঋষিদের জ্ঞান গরিমা ও তাদের স্তোত্রাদির মধ্যে প্রকাশ পাওয়া যায়,
নারীদেরকে পুরুষদের সাহায্যকারী ও সম্পূরক হিসাবে বিবেচনা করে উল্লেখ হয়েছে।
বৈদিক যুগের যে সকল নারী ঋষিকাদের মধ্যে ধ্যান, ধারণা, প্রজ্ঞা, জ্ঞান, বুদ্ধি ,বিবেক ও আধ্যাত্মিকতার বিশেষ দৃষ্টান্ত পাওয়া তাদের মধ্যে,
লোপামুদ্রা, মৈত্রেয়ী, গার্গী, অদিতি, ঘোষা, ব্রহ্মজায়া, অপাল, পৌলমী, বাক, অপত্ত, বিশ্বম্বরা, কত্রু, জুহ, মেধা, রোমাশা, নিষৎ, সবিতা, ভগস্ত্রীনি, ইন্দ্রনী, দেবায়নী, শিক্তা, যরিতা, শ্রদ্ধা, কক্ষিবতী, উর্বশী, দক্ষিণা, স্বর্লগা…
এদের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য!
এদের মধ্যে কয়েকজন নারী ঋষিকা ঈশ্বরের প্রতি স্তুতি / স্তোত্র রচনা করে তাদের অসাধারণ জ্ঞান, গরিমার ও প্রজ্ঞার দৃষ্টান্ত রেখেছেন।
এদের মধ্যে মৈত্রেয়ী, লোপামুদ্রা, ঘোষা, গার্গী… বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য।
এসব নারী ঋষিকাদের বিবরণ থেকে সহজেই অনুমেয় হয়,
প্রাচীন ভারতবর্ষের তৎকালীন বৈদিক যুগে নারীদের শিক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা ও গুরুকূল/বিদ্যানিকেতন ছিল।
ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের অংশগ্রহণ ছিল উল্লেখযোগ্য।
ঋগ্বেদে উল্লেখ আছে নারী ও পুরুষ একসঙ্গে যজ্ঞ করার।
অতএব, এটা পরিষ্কার ভাবে বোঝা যায় যে,
প্রাচীন ভারতবর্ষের নারীগণ শুধুমাত্র আর্থিক অথবা সাংসারিক দিকেই নয় বরং পরমার্থিক দিকেও অগ্রসর হয়েছিলেন।
সেই সময় অস্ত্র বিদ্যাতেও দক্ষ নারীদের বর্ণনা পাওয়া যায়,
বৈদিক যুগের এক খ্যাতনামা নারী সেনাপ্রধান ছিলেন মুদ্গলনি।
আরও পড়ুন : রাণী ভবশঙ্করী
তৎকালীন বৈদিক যুগে যে সকল নারীগণ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সাধিকা/ ব্রহ্মবাদিনী ব্যাতীত এই উপমহাদেশের দার্শনিক সমাজে খ্যাতি অর্জনে সমর্থ হয়েছিলেন,
তাদের মধ্যে ঋষিকা মৈত্রেয়ীর নাম বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য!
তাঁর গুণের প্রভাবে তিনি প্রাচীন ভারতবর্ষে একজন বিখ্যাত নারী হিন্দু দার্শনিক হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন।
মৈত্রেয়ী নামের অর্থ বন্ধুভাবাপন্না। ঋষিকা মৈত্রেয়ী শুধু বৈদিক যুগের একজন হিন্দু নারী ঋষি অথবা দার্শনিক ছিলেন না,
বরং তাঁকে ভারতীয় বিদূষীদের এক অনন্য প্রতীক হিসাবে গণ্য করা হয়।
চিন্তন ও জ্ঞানগরিমায় প্রজ্ঞাবতী বৈদিকযুগের নারী ব্রহ্মবাদিনী (বেদের ব্যাখ্যাকর্ত্রী),
জ্ঞানী ও মহান এই মহিলা দার্শনিক ঋষি ঋষিকা মৈত্রেয়ী আনুমানিক ১১১০ থেকে ৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে বৈদিক যুগের শেষের দিকে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন।
বিখ্যাত সনাতনী গ্রন্থ অশ্বলায়ন গৃহ্য সূত্র গ্রন্থ অনুযায়ী, ঋষিকা মৈত্রেয়ীর সম্পূর্ণ নাম ছিল সুলভা মৈত্রেয়ী এবং তিনি ঋষি মৈত্রীর কন্যা ছিলেন।
তাঁর পিতা ঋষি মৈত্রী মিথিলার বিদেহ রাজ্যে বসবাস করতেন। তাঁর পিতা মিথিলার রাজা জনকের রাজসভার একজন মন্ত্রী ছিলেন।
ঋষিকা মৈত্রেয়ী ঋক বেদের ১০০০ শ্লোকের মধ্যে, অন্তত ১০ টি শ্লোকের রচনা করেছিলেন।
বৈদিক যুগের সময় উষালগ্নে নারীগণ বেদ অধ্যায়ন ও বেদে নির্দেশিত বিধিবিধান পালন করত।
বৈদিক যুগে যে সকল নারীগণ সারাজীবন কুমারী থেকে বেদপাঠ, বেদচর্চা এবং বৈদিক ধর্ম একনিষ্ঠভাবে পালন করত, তাদেরকে ব্রহ্মবাদিনী বলে অভিহিত করা হত।
বৃহদারণ্যক উপনিষদের তথ্যমতে, ঋষিকা মৈত্রেয়ী বিবাহিতা ছিলেন, তাঁর স্বামী ছিল
ঋষি যাজ্ঞবল্ক্য।
মহাগ্রন্থ মহাভারত ও গৃহ্য সূত্রে তাঁকে একজন চিরকুমারী অদ্বৈতবাদী দার্শনিক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: রাজা প্রতাপাদিত্য
ভারতীয় বহু সংখ্যক প্রাচীন গ্রন্থে মৈত্রেয়ীর উল্লেখ পাওয়া যায়।
তবে এ দুই মহান গ্রন্থের ভাষ্যমতে আছে, তিনি অনেকবড় জ্ঞানী ঋষিকা ছিলেন।
ঋষি যাজ্ঞবল্ক্য ও ঋষিকা মৈত্রেয়ীর উপাখ্যান :
বৃহদারণ্যক উপনিষদের তথ্যমতে,
মৈত্রেয়ী ঋষিকা মৈত্রেয়ী নিজেই ঋষি যাজ্ঞবল্ক্যের (আনুমানিক খৃষ্টপূর্বাব্দ ৮ম থেকে ৭ম শতক) কাছে গিয়ে ব্রহ্মজ্ঞান লাভের জন্য শিষ্যত্ব প্রার্থনা করে।
ঋষিকা মৈত্রেয়ী ঋষি যাজ্ঞবল্ক্যকে স্বামী হিসাবে গ্রহণ করে ধর্মচর্চা, সাধনা ও ব্রহ্মজ্ঞান অধ্যয়ন করতে থাকেন।
তিনি তাঁর স্বামী ঋষি যাজ্ঞবল্ক্যের সঙ্গে ধর্মচর্চা, আধ্যাত্মিক চিন্তাভাবনা এবং সাধনার একান্ত সহযোগিনী ছিলেন।
ঋষি যাজ্ঞবল্কের প্রথম স্ত্রী কাত্যায়নী স্বামীর দ্বিতীয় বিয়েতে আপত্তি করেনি।
ঋষিকা মৈত্রেয়ী অত্যান্ত ধর্মশীলা ছিলেন,
স্বামীর মতাে তিনিও ধ্যান ও আরাধনায় মগ্নহয়ে আশ্রমকেন্দ্রিক সময় অতিবাহিত করতেন।
স্বামীর সঙ্গে ব্রহ্মবিদ্যা আলােচনায় তিনি অপার আনন্দ লাভ করতেন।
অপর দিকে কাত্যায়নী ছিলেন গৃহ ধর্মপরায়ণা,
তাঁর ধ্যান জ্ঞান ছিল স্বামীর সেবা। যাজ্ঞবল্ক ও ঋষিকা মৈত্রেয়ীর মধ্যে ধর্মালোচনায় তর্ক বিতর্ক হত।
পরবর্তীতে অষ্টম শতাব্দীতে আদি শঙ্করের শিষ্য সুরেশ্বর এসব বিষয় লিপিবদ্ধ করেন।
ঋষি যাজ্ঞবল্ক্য বলেছিলেন‚ পৃথিবীতে সবকিছুই নির্ভর করে আত্মার উপস্থিতির উপর।
আত্মা উপস্থিত না থাকলে প্রেম অসম্পূর্ণ থাকে, সেটা এই বিশ্ব সংসারের যেকোন সম্পর্কই হোক।
যে ব্যাক্তি নিজেকে দেখেছে‚ শুনেছে‚ প্রতিফলিত করেছে‚ অনুভব করেছে একমাত্র সেই ব্যাক্তিই বিশ্ব সংসারের সারাৎসার উপলব্ধি করতে পারে।
এভাবেই চলতে থাকে দুই স্ত্রীকে নিয়ে ঋষি যাজ্ঞবল্ক্যের আশ্রমিক জীবন।
যাজ্ঞবল্ক্য ঋষিকা মৈত্রেয়ী সংবাদ :
বৃহদারণ্যক উপনিষদে পাওয়া যায়,
তিনি তাঁর স্বামী ঋষি যাজ্ঞবল্ক্যের সাথে বিভিন্ন দার্শনিক তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করেন,
যেগুলো দর্শন জগতের এক অমূল্য সম্পদ।
এই দার্শনিক আলোচনা “মৈত্রেয়ী যাজ্ঞবল্ক্য সংবাদ” নামে পরিচিতি লাভ করে পন্ডিত সমাজে।
পাঠকদের জন্য সেই আলোচনার অংশ তুলে ধরা হল!
আরও পড়ুন: রাজা বিক্রমাদিত্য
একদিন ঋষি সন্ন্যাস গ্রহণের সিধান্ত গ্রহণ করেন। নিজের সব সম্পদ সমান ভাগে ভাগ করে দিয়ে গৃহত্যাগ করার কথা স্ত্রীদের বলেন।
কারণ, তাঁর অনুপস্থিতিতে স্ত্রীদের মধ্যে এই সম্পদ নিয়ে কলহ অথবা মতের অমিল হতে পারে।
প্রথম স্ত্রী কাত্যায়নী স্বামীর এই আদেশ মেনে নিলেও দ্বিমত প্রকাশ করেন সনাতন ধর্মশাস্ত্র সম্পর্কীয় কাব্য ও ছন্দোবদ্ধ কাব্য গুণের অসাধারণ অধিকারিনী ও ব্রহ্মবাদিনী ঋষিকা মৈত্রেয়ী!
তিনি স্বামীর সম্পত্তি নিতে পারবেন না বলে উল্টো প্রশ্ন করে বলেন,
প্রভু, আপনি যে অর্থ সম্পদের কথা বলছেন, সেই সম্পর্কে আমার কিছু কৌতূহল আছে।
শুধু আপনার আশ্রমের ধন,অর্থ, সম্পত্তি না; সম্পদে পরিপূর্ণ সমগ্র পৃথিবী যদি আমার হয়, তবে কি আমি সেই সব সম্পদ দিয়ে অমৃতত্ব লাভ করতে পারব?
এই ধন, সম্পদ, অর্থ, প্রাচূর্য দিয়ে যদি আমি বহু যজ্ঞক্রিয়া করি;
তবে আমি কি মোক্ষ লাভ করতে পারব?
যেই আলোকবর্তিতা দেখতে চাই‚ সেটা দেখতে পারব?
জ্ঞানী ও বুদ্ধিদীপ্ত ঋষিকা মৈয়েত্রী আরও জিজ্ঞাসা করেন, এই পৃথিবীর সমগ্র ধন সম্পদ কি অবিনস্বর?
ঋষিকা মৈত্রেয়ীর প্রশ্নে ঋষি যাজ্ঞবল্ক্য অত্যন্ত আনন্দিত হয়ে উত্তর দেন, ‘মৈত্রেয়ী, সেটা সম্ভব না!
সম্পদের মাধ্যমে কখনও অমৃতত্ব লাভ করা যায় না,
বরং ধন সম্পদের কারণে বেশিরভাগ সময় অমৃতত্ব সাধনা ব্যাহৃত হয়।
আরও পড়ুন : গঙ্গা,যমুনা,সরস্বতীর পবিত্র ভূমি
সম্পদ বা ঐশ্বর্য কোনদিন কাউকে মোক্ষ দিতে পারে না।
ধন সম্পদের কারণে মন ধীরে ধীরে ঈশ্বরের থেকে দূরে সরে গিয়ে ভোগবিলাসে মত্ত হয়।
তবে, পৃথিবীতে ধনী ব্যক্তিগণ যেমন দারিদ্র্যমুক্ত হয়ে সুখ ও ভােগবিলাসিতা করে, তুমিও এটাই পারবে।
ঋষিকা মৈত্রেয়ী স্বামীর উত্তর শুনে বিষন্ন হয়ে বলেন,
যে ধন সম্পদ দিয়ে আমার অমৃতত্ব লাভ হবে না, সেই সম্পদ দিয়ে আমি কী করব?
অতএব, এই ধন সম্পদ দিয়ে আমার কোন লাভ হবে না!
হে ভগবান, আপনি যে সম্পদের গুণে এই সম্পদ ত্যাগ করছেন; আপনি যে জ্ঞান লাভ করে মহান জ্ঞানী হয়েছেন,
কৃপাপূর্বক আমাকে সেই জ্ঞান সম্পর্কে উপদেশ দিন,
আমাকে অমৃতত্ব /মোক্ষ লাভের সন্ধান দিন।
ধন, অর্থ, সম্পদ সম্পর্কে ঋষিকা মৈত্রেয়ীর এই ধারণা এবং অমৃতত্ব সাধনায় অতি উৎসাহ দেখে ব্রহ্মজ্ঞ ঋষি যাজ্ঞবল্ক্য অত্যন্ত আনন্দিত হয়ে বলেন,
স্বামী স্ত্রীর প্রতি প্রিয় হওয়ার কারণ, স্বামীকে ভালােবেসে স্ত্রীর আত্মা সুখী হয়।
সন্তানদের বাৎসল্য রসে স্নেহ করে, পিতা মাতা আত্মিক সুখ অনুভব করেন, এই কারণে সন্তানগণ পিতা মাতার স্নেহে নিজের মধ্যে আত্মিক সুখ অনুভব করে।
এজন্য সন্তানগণ পিতা মাতার প্রতি সবসময় অনুরক্ত থাকে।
আরও পড়ুন : আর্যরা বহিরাগত?
অর্থ সম্পদের নিমিত্তই অর্থ সম্পদ মানুষের প্রিয় হয় না, নিজ প্রয়ােজনের জন্যই সম্পদ মানুষের প্রিয় হয়।
কারণ, মানুষ সম্পদ শুধুমাত্র ভোগ করা ব্যাতীত আর কিছুই করতে পারে না।
সম্পদ মানুষকে অমরত্ব/মোক্ষ কিছুই দিতে পারে না।
স্বামীর শক্তি, পুত্রের শক্তি, স্ত্রীর শক্তি আর সম্পদের শক্তি, এমন কি স্বর্গ অথবা দেবতাদের বাক্য শক্তি সব কিছুই নিজ নিজ আত্মার সুখের জন্যই মানুষের প্রিয় হয়ে থাকে।
অর্থাৎ মূল বিষয়বস্তু হল,
আত্মাই মানুষের মূল আনন্দের বস্তু। তাই ধন, সম্পদ, অর্থ, বিত্ত, স্বর্গ এ সবকিছুই গৌণ।
প্রকৃত ভালবাসা আত্মা এবং পরমাত্মার সঙ্গে যুক্ত। স্বামীর আত্মার প্রতি ভালবাসার মাধ্যমে একজন প্রিয় স্বামী পাওয়া যায়।
স্ত্রীর আত্মার প্রতি ভালবাসার মাধ্যমেই একজন প্রিয় স্ত্রী পাওয়া যায়।
এক্ষেত্রে দর্শন, শ্রবণ, ধ্যানের মাধ্যমে আত্মাকে উপলব্ধি করা প্রয়োজন।
যে ব্যাক্তি দর্শন, শ্রবণ, ধ্যানের মাধ্যমে আত্মাকে উপলব্ধি করতে পারে, একমাত্র তিনিই পারেন সমগ্র বিশ্বের জ্ঞান অর্জন করতে।
নিজ স্বামী মহান ব্ৰহ্মর্ষি যাজ্ঞবন্ধ্যের উপদেশ আনন্দিত চিত্তে শ্রবণ করে ঋষিকা মৈত্রেয়ী তৃপ্তি লাভ করলেন।
তিনি বুঝতে পারলেন অমৃতের মহাসাগর অতি নিকটে, একেবারে তার অন্তরস্থিত অন্তরে।
পরম অমৃত তাঁর আত্না ব্যাতীত আর কিছুই না! এভাবেই ঋষিকা মৈত্রেয়ী অমৃতের আলোকজ্বল পথের সন্ধান পেয়েছিলেন।
এই ধর্মালোচনার মাধ্যমে সনাতন দর্শনের আত্মা বিষয়ক ধারণা সহজেই বোধগম্য হয়।
অর্থাৎ, এই আলোচনার অনুযায়ী, মানুষের আত্মা থেকে প্রেম উৎসারিত হয়।
ঋষি যাজ্ঞবল্ক্য ও ঋষিকা মৈত্রেয়ীর আত্মা, ব্রহ্মের প্রকৃতি এবং এই দুই বিষয়ে একতা আলোচনাই অদ্বৈত দর্শনের মূল বিষয়বস্তু।
বৃহদারণ্যক উপনিষদ গ্রন্থের এই “মৈত্রেয়ী যাজ্ঞবল্ক্য” সংবাদ সুরেশ্বর রচিত বার্ত্তিক টীকার মূল বিষয়বস্তু।
এরপর তিনিও স্বামীর সঙ্গে সন্ন্যাস নিয়ে শাশ্বত খুঁজতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
ঋষি যাজ্ঞবল্ক্য গৃহাশ্রম ত্যাগ করার পরে ঋষিকা মৈয়েত্রী ও সন্ন্যাসজীবন গ্রহণ করেন,
তারপর সন্ন্যাসিনী হয়ে পথে পথে ভিক্ষা গ্রহণ করেন এবং দর্শন, শিক্ষা ও আধ্যত্মিক জ্ঞান প্রচার করেন।
উপসংহার
সন্ন্যাসিনী ঋষিকা মৈত্রেয়ী ও কিন্তু দর্শন নিয়ে চ্যালেঞ্জ করেন ঋষি যাজ্ঞবল্ক্যকে, জমে ওঠে সন্ন্যাস ও সন্ন্যাসিনীর এই তর্ক! এভাবেই জীবনের শেষ সময় অতিবাহিত করেন ঋষিকা মৈত্রেয়ী।
তাঁর কাছে স্বামী এবং দাম্পত্য শুধু সংসারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং বিয়ে নামের পবিত্র সম্পর্ককে তিনি রূপান্তরিত করেছিলেন জ্ঞান ও মুক্তি লাভের সিঁড়ি হিসাবে।
তাঁর প্রচেষ্টার ফলে ‘মৈয়েত্রী উপনিষদ’ নামক গ্রন্থটি আমাদের মাঝে!
ভারতবর্ষে নারীদের শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ এবং নারীদের দার্শনিক জ্ঞান লাভ সম্পর্কে মত প্রকাশ করতেন তিনি।
তাঁরা পথ দেখিয়েছিলেন, পুরুষগণ সংসারধর্ম পালন করে যদি ব্রহ্মজ্ঞানী হতে পারে‚ তবে নারীদের সাধনায় সংসার কখনও বিঘ্ন হবে না।
একজন ঋষিকা, জ্ঞানী, ব্রহ্মবাদিনী, প্রজ্ঞাবতী, দার্শনিক, বুদ্ধিদীপ্ত নারী, হিসাবে তাঁর সম্মান প্রদর্শনে বর্তমান ভারতে তাঁর নামে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান নির্মিত হয়েছে।
নয়াদিল্লীতে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামকরণ ঋষিকা মৈত্রেয়ীর নামে করা হয়েছে। তামিলনাড়ুতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, মৈয়েত্রী বৈদিক গ্রাম।
শিক্ষনীয় পোষ্ট। এ বিষয়ে আরও জানতে আমাদের ওয়েবসাইট এ ঘুরে আসতে পারেন https://jagrotobangladesh.com/national/%e0%a6%aa%e0%a6%b9%e0%a7%87%e0%a6%b2%e0%a6%be-%e0%a6%ab%e0%a6%be%e0%a6%b2%e0%a7%8d%e0%a6%97%e0%a7%81%e0%a6%a8/
Pingback: বেদের আলোই বিজ্ঞানের আলো | বিজ্ঞানের সৃষ্টি বেদ থেকে | ঋষিদের আবিস্কার | সনাতন ধর্ম ও বিজ্ঞান - shivrupi
Pingback: রাজা শশাঙ্ক | বাংলার ইতিহাসে গৌড়রাজ শশাঙ্কের কৃতিত্ব - shivrupi
Pingback: চাণক্য নীতি ও চাণক্য শ্লোক