পৃথ্বীরাজ চৌহান | পৃথ্বীরাজ ও সংযুক্তা
পূর্বেই বলেছি, বহু পুরোনো এই পৃথিবীর মানচিত্রে মানবসভ্যতার ইতিহাস মাত্র কয়েক হাজার বছরের! মানুষ তার সৃজনশীল মেধার গুণে তৈরি করেছে বহু বিচিত্র সভ্যতা, সাম্রাজ্য! বহু গুণী সম্রাট/রাজা/ মহারাজা শাসন করেছে এ পৃথিবী দুর্দণ্ড প্রতাপে! কিন্তু ভয়ংকর কালের করালগ্রাসে নিমজ্জিত সবাই! কেবল তারাই ইতিহাসে উজ্জল হয়ে আছে, যারা তাদের কর্মের গুণে অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছিল!
ইতিহাসে দেখা যায়, ভিনদেশী লুটেরা যখন ভারতবর্ষের বুকে উন্মত্ততা চালাতে এসেছে, তখনই কেউ না কেউ রক্ষক হয়ে সমগ্র দেশকে রক্ষা করে আক্রমণকারী দের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছে!
কিন্তু তাদের বেশিরভাগ করুণ পরিণতি বরণ করেছে, কাছের এক/একাধিক ব্যাক্তির মীর জাফরের ভূমিকার কারণে!
আজ এমনি বিশ্বখ্যাত সম্রাটের জীবনি আপনাদের কাছে তুলে ধরব, যিনি বীর সম্রাট হয়ে রাজ্যপালন করে অবশেষে করুণ পরিণতি বরণ করেছিলেন স্বজাতির কতিপয় বেইমান দের কারণে, তবুও স্বধর্ম ত্যাগ করেন নি!
পৃথ্বীরাজ চৌহান
এই মহান বীর পৃথ্বীরাজ চৌহান ১১৪৯ সালে গুজরাটে জন্ম গ্রহণ করেন। পৃথ্বীরাজ বিজয় কাব্য মতে বাংলার জ্যৈষ্ঠ মাসের ১২ তারিখে তাঁর জন্ম হয়েছিল।
তাঁর বাবার নাম ছিল চৌহান রাজা সোমেশ্বর। তাঁর মাতা ছিল কর্পুরা দেবী।
পৃথ্বীরাজ বিজয় কাব্য:
পৃথ্বীরাজ বিজয় কাব্য থেকে জানা যায় যে, পৃথ্বীরাজ চৌহান মোট ছয়টি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করেছিলেন এবং পৃথ্বীরাজ রাসো কাব্য অনুযায়ী ধর্ম, দর্শন, চিকিৎসা, ইতিহাস, চিত্রকলা, গণিত সহ মোট ১৪ টি বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করেছিলেন।
ইতিহাসে তাঁর সবচেয়ে বেশি খ্যাতি ছিল তীরন্দাজি / ধর্নুবিদ্যার জন্য।
পৃথীরাজ চৌহান শুধুমাত্র ভারতে না, তৎকালীন সময়ে বিশ্বের মহান রাজাদের তালিকায় অর্ন্তভুক্ত ছিল একজন সাহসী পরাক্রমশালী যোদ্ধা ও সম্রাট হিসেবে।
দ্বিতীয় পৃথ্বীরাজের মৃত্যুর পরে তাঁর বাবা সোমেশ্বর চৌহান সিংহাসনে বসেন এবং পৃথ্বীরাজের মাত্র এগারো বছর বয়সেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। নাবালক বয়সেই মায়ের পরামর্শে সিংহাসনে বসেন পৃথ্বীরাজ চৌহান।
পৃথ্বীরাজ চৌহানের জীবনি:
কিছু ঐতিহাসিক গণের মতে, কাপুরী দেবী ছিলেন তার পিতার একমাত্র সন্তান, তাই প্রতিদিন মহারাজা অনঙ্গপাল চিন্তা করতেন যে, তিনি মারা যাওয়ার পর তার রাজ্য কে শাসন করবে। এভাবে চিন্তা করে একদিন তিনি তার মেয়ে ও জামাইয়ের সামনে রাজ্যের শাসনভার তার নাতিকে দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। এইভাবে তিনজনের সন্মতিতে পৃথ্বীরাজ চৌহান উত্তরাধিকারী করা হয়।
1166 সালে মহারাজা অনঙ্গপাল মারা গেলে, তার পর দিল্লির সিংহাসনের নতুন রাজা হিসাবে পৃথ্বীরাজ চৌহান রাজ্যাভিষেক হয় সম্পূর্ণ বৈদিক মন্ত্রের মাধ্যমে।
যাইহোক, নাবালক থাকার কারণে রাজত্বের সমস্ত প্রশাসনিক ব্যাপার তাঁর মা দেখাশোনা করতেন। এই সময় চৌহান রাজত্বের মুখ্যমন্ত্রীর পদে ছিলেন কদম্বভাসা।
কিছু ঐতিহাসিক দের মতে এই মন্ত্রীর জন্যেই রাজত্বের প্রথমদিকে সমস্ত যুদ্ধে জয়লাভ করেছিলেন পৃথ্বীরাজ চৌহান। আবার একাংশ মনে করেন, ভারতে বারবার মুসলিম আক্রমণের জন্য দায়ী ছিলেন এই মন্ত্রী কদম্বভাসাই।
পৃথ্বীরাজের মা কর্পুরা দেবীর কাকা ভুবনাইকামাল্লা এই সময় তাঁদের রাজত্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন।
পৃথ্বীরাজ বিজয় কাব্যে উল্লেখ করা হয়েছে গরুড় যেমন বিষ্ণুর সেবা করেন, তেমনি ভুবনাইকামাল্লা পৃথ্বীরাজের সেবা করতেন।
ভারতবর্ষের শেষ হিন্দু সম্রাট ছিলেন পৃথ্বীরাজ চৌহান (Prithviraj Chauhan)।
দ্বাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে উত্তর ভারতের আজমের ও দিল্লির শাসনভার ছিল তাঁরই হাতে। মাত্র তেরো বছর বয়সে সিংহাসনে বসে উত্তরে থানেশ্বর ও দক্ষিণে মেবার পর্যন্ত রাজত্ব বিস্তার করে খ্যাতি অর্জন করেন তিনি।
পৃথ্বীরাজ চৌহান সিংহাসনে বসার পর প্রথম যুদ্ধে চান্দেলার রাজা পরমর্দিকে হারিয়ে উল্লেখযোগ্য সাফল্য পান । তিনি দীর্ঘ যুদ্ধের পর জেজাকাভুক্তি (বর্তমানে বুন্দেলখণ্ড) পুনর্দখল করেন।
চৌহান গোত্রের রাজা পৃথ্বীরাজ চৌহান ছিলেন রাজপুতদের মধ্যে সবচেয়ে দুধর্ষ, বীর ও সাহসী। রাজপুতদের মধ্যে তারা নিজেদেরকে অগ্নীবংশী বলে দাবি করতেন।
তুর্কিদের আক্রমণের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম তিনিই ভারতের হিন্দু রাজাদের একজোট করেছিলেন। রাজস্থান, দিল্লি, হরিয়ানা, পাঞ্জাবের কিছু অংশ, উত্তরপ্রদেশ ও মধ্যপ্রদেশ পযর্ন্ত সাম্রাজ্য বিস্তার করেছিলেন পৃথ্বীরাজ চৌহান
তাদের রাজ্যকে বলা হত শতদলপক্ষ। ঐতিহাসিকদের মতে, পৃথিরাজ নাগা উপজাতিদের পরাজিত করতে সমর্থ হন। তাঁর দূর সম্পর্কের এক ভাই নাগার্জুন যখন চৌহান রাজবংশের উপর আক্রমণ করলে, তাঁকে পরাজিত করেন পৃথ্বীরাজ চৌহান।
বহু আগে থেকেই চতুর্থ বিগ্রহরাজার পুত্র নাগার্জুনের সঙ্গে পৃথ্বীরাজ চৌহানের পারিবারিক বিবাদ শুরু হয়েছিল। নাগার্জুন পৃথ্বীরাজের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে গুদাপুরা দূর্গ দখল করেন, কিন্তু পৃথ্বীরাজ চৌহান সেই দূর্গ পুনরায় দখল করেন এবং নাগার্জুনকে পরাজিত করেন।
১১৮২ সাল নাগাদ পৃথ্বীরাজ চৌহান অধুনা ভীওয়ানি, আলওয়াড় অঞ্চলের রাজাদের পরাজিত করে ঐ অঞ্চলের শাসনভার দখল করেন।
এই সময়কারই মদনপুর শিলালিপি থেকে জানা যায় যে তিনি জেজাকাভুক্তির চাণ্ডিলা রাজা পরমার্দিকে পরাজিত করেছিলেন। এই জেজাকাভুক্তি হল বর্তমানকালের বুন্দেলখণ্ড। এরপরে গুজরাটের চালুক্য বংশের রাজা দ্বিতীয় ভীমের সঙ্গে যুদ্ধের পরে একটি শান্তিচুক্তি হয় পৃথ্বীরাজ চৌহান ও ভীমের মধ্যে।
চালুক্য এবং চৌহানদের মধ্যে এই যুদ্ধ যে আসলে হয়েছিল তার অনেক প্রমাণ পাওয়া যায় বিভিন্ন শিলালিপিতে।
পৃথ্বীরাজ রাসো কাব্য অনুযায়ী পৃথ্বীরাজ চৌহান এর কাকা কাহ্নদেব ভীমের কাকা ষড়যঙ্গদেবের সাত পুত্রকে হত্যা করেছিল।
এই হত্যার প্রতিশোধ নিতেই চালুক্যরা চৌহানদের আক্রমণ করে এবং পৃথ্বীরাজ চৌহান এর বাবা সোমেশ্বরকে হত্যা করে ও নাগোর দখল করে নেয়।
কিন্তু পরে পৃথ্বীরাজ চৌহান এর কাছে তাঁরা সকলেই পরাজিত হয়েছিল।
অপরদিকে আবু পাহাড়ের সমগ্র অঞ্চলটি তৎকালীন সময় চালুক্যদের সামন্তরাজা ধারাবর্ষ শাসন করতেন। গুজরাট জয় করার সময় পৃথ্বীরাজ চৌহান এই অঞ্চল দখল করতে চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হয়েছিলেন।
কনৌজকে কেন্দ্র করে সেই সময় গাহদাবল রাজত্ব শাসন করতেন জয়চাঁদ।
কবি চান্দ বারদাই এর মতে, রাজা পৃথ্বীরাজ চৌহানের তলোয়ার চালানো এবং ধর্নুবিদ্যার সুনাম ছিল ভারতবর্ষ জুড়ে, এমনকি ভারতবর্ষের বাইরেও সবাই তার প্রশংসা করত।
রাজকবি চান্দ বারদাই পৃথ্বীরাজের বন্ধু ছিলেন। ইতিহাস অনুযায়ী পৃথ্বীরাজ চৌহান এবং চান্দ বারদাই এর জন্ম এবং মৃত্যুর লগ্ন এক। পারিবারিক দিক দিয়েও চান্দ বারদাই পৃথ্বীরাজ চৌহান আত্মীয় ছিলেন।
পৃথ্বীরাজ চৌহান নিজে শুধু একজন সাহসী যোদ্ধা ছিলেন না, তিনি সৈন্যবাহিনী ও তৈরি করেছিলেন অত্যন্ত পরাক্রমশালী এবং বিশাল।
প্রাচীন লেখা অনুসারে, পৃথ্বীরাজের সেনাবাহিনীতে 300 টিরও বেশি হাতি ছিল এবং তার সেনাবাহিনীতে 300,000 এরও বেশি সাহসী সৈন্য ছিল, যারা বিভিন্ন বর্ণের ছিল।
এই বিশাল সৈন্যবাহিনীর কারণে পৃথ্বীরাজ চৌহান অনেক রাজ্যের রাজাদের পরাজিত করে তার রাজ্যের সীমানা বৃদ্ধি করেন।
এরপর পৃথ্বীরাজ চৌহান হাঁসি, সরস্বতী এবং সিরহিন্দ নামক স্থান জয় করে তার সাম্রাজ্যের অর্ন্তভুক্ত করেন।
পৃথ্বীরাজ চৌহান এবং তার বাল্যবন্ধু চন্দ্রবর্দাইয়ের মধ্যে অনেক আন্তরিকতা ছিল। তারা বন্ধু ছিল, কিন্তু তারা দুজনেই একে অপরকে বন্ধুর চেয়ে ভাই হিসাবে বেশি মনে করত।
চন্দ্রবর্দাই ছিলেন অনঙ্গপাল তোমর বংশের। চন্দ্রবর্দাই দিল্লির শাসক হিসাবেও দায়িত্ব নেন এবং পাশাপাশি তিনি পৃথ্বীরাজ চৌহানের সহায়তায় পিথোরাগড় তৈরি করেছিলেন, যা এখনো পুরোনো দুর্গ হিসাবে দিল্লিতে আছে।
কনৌজের (মূলত কান্যকুব্জ জাতীর ব্রাহ্মণ ছিলেন তাঁরা যাঁদের ভগবান শ্রী পরশুরামের বংশধরও বলা হয়ে থাকে। )
রাজা জয়চাঁদ পৃথ্বীরাজ চৌহানের প্রশংসা কখনো সহ্য করতেন না। যেকোন প্রকারে পৃথ্বীরাজের ক্ষতি সাধন করা তার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল।
কনৌজ রাজকন্যা সংযুক্তা অত্যন্ত রূপবতী ছিলেন। তার রূপের খ্যাতিও ছড়িয়ে পড়েছিল সমগ্র ভারতবর্ষে।
পৃথ্বীরাজ ও সংযুক্তা
একইভাবে সংযুক্তারও একজন সখী ছিল। তার নাম চাকোরী, কিছু ঐতিহাসিকের মতে তার নাম ছিল মদনা।
মদনা একদিকে সখী, সেবিকা আবার প্রয়োজনে তলোয়ার চালনা ও অশ্বারোহণে ও দক্ষ ছিল। মদনার মুখেই রাজকুমারী সংযুক্তা মহারাজ পৃথ্বীরাজ চৌহানের রূপ, গুণ, যৌবন, বীরত্ব ও সাহসের কথা শোনেন।
দিনের পর দিন পৃথ্বীরাজ চৌহানের নানান বীরত্ব কাহিনী শুনে রাজকন্যার মনে পৃথ্বীরাজকে দেখার প্রবল আকাঙ্ক্ষা জাগরিত হয়।
অপরদিকে পৃথ্বীরাজও লোকমুখে সংযুক্তার রূপ-লাবণ্যের প্রশংসা শুনতে থাকেন। তার মনেও সংযুক্তাকে দেখার ইচ্ছে হয়।
দুজনের প্রথম সাক্ষাৎ হয় কোটেশ্বর মন্দিরে। পৃথ্বীরাজ ও সংযুক্তা দুজনেই ছদ্মবেশ ধারণ করে একে অপরের সামনে এসেছিলেন। ধীরে ধীরে দুজনের সম্পর্ক আরও নিবিড় হতে থাকে।
একাধিক প্রেমপত্র ও বিনিময় হয়।
পৃথ্বীরাজের হয়ে ব্রজবুলি ভাষায় প্রেমপত্রগুলো লিখতেন চান্দ বারদাই। পায়রার মাধ্যমে সেই পত্র পৌঁছে যেত কনৌজ রাজকন্যার হাতে।
আবার সংযুক্তার প্রেমপত্রও পৌঁছে যেত দিল্লির দরবারে।
এভাবেই চলছিল পৃথ্বীরাজ এবং সংযুক্তার প্রেম। কিন্তু পৃথ্বীরাজ এবং সংযুক্তার গোপন প্রেমকাহিনীর বিষয়ে রাজা জয়চাঁদ জানতে পারলে তারাতারি রাজকন্যার স্বয়ংবর সভার আয়োজন করেন।
স্বয়ংবর সভার পূর্বে এক বিশাল রাজকীয় যজ্ঞের আয়োজন করেন। যজ্ঞের আগে পৃথ্বীরাজ চৌহানের কাছে একটি অপমানজনক পত্র পাঠান জয়চাঁদ।
পৃথ্বীরাজ যোগ্য জবাব দেওয়ার জন্য স্বল্প সময়ের মধ্যেই পরিকল্পনা করে ফেলেন।
রাজকবি চন্দ্রবরদাই এর সেবক গনপথডাঙ্গির ছদ্মবেশ নিয়ে পৃথ্বীরাজ কনৌজের দরবারে পৌঁছান।
তখন রাজকবিদের একটা অন্যরকম সম্মান ছিল। শত্রুদেশের রাজাদের কাছেও বিদ্বান রাজকবিরা সমাদর পেতেন।
চন্দ বারদাই, গনপথডাঙ্গি আর গুটি কয়েক চৌহানসেনা কনৌজের অতিথিশালায় স্থান পেলেন।
কবিদের আলাপের সময় গনপথডাঙ্গি কনৌজের পণ্ডিতদের কিছু কাব্য সংক্রান্ত প্রশ্ন করেন কিন্তু কনৌজদেশীয় পণ্ডিতগণ তার উত্তর দিতে অসমর্থ হলে গনপথডাঙ্গি নিজেই সেই উত্তর বলে দেন।
এর ফলে কনৌজদেশীয় রাজসভায় চান্দ বারদাই এর খ্যাতি আরও বেড়ে যায়। রাতের আধাঁরে পৃথ্বীরাজ চৌহান যজ্ঞস্থলের কাছে পৌছে দেখলেন কয়েক শত সেনা যজ্ঞস্থল পাহারা দিচ্ছে।
যজ্ঞ শুরুর আগের দিনই পৃথ্বীরাজ পাহারারত সমস্ত সেনাদের মেরে ফেলেন এবং যজ্ঞবেদীতে একটি পত্র রেখে দেন যার দ্বারা সহজেই বোঝা যায়, এটা একমাত্র পৃথ্বীরাজ চৌহানের দ্বারাই সম্ভব।
পরদিন সকালে সবকিছু জানতে পেরে জয়চাঁদ ক্ষোভে ফেটে পড়লেন। রাজকন্যার স্বয়ংবর সভার অয়োজন শুরু করলেন।
কিন্তু পৃথ্বীরাজকে কোনো আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হল না। তার পরিবর্তে রাজসভার প্রবেশদ্বারের পাশেই পৃথ্বীরাজের একটা মূর্তি বানিয়ে রাখা হলো। উদ্দেশ্য, পৃথীরাজকে অপমান করা।
চিন্তামগ্ন অবস্থায় সংযুক্তা তার স্বয়ংবর সভার কথা জানিয়ে পৃথ্বীরাজকে পত্র পাঠালো।
পৃথ্বীরাজ চৌহান উত্তরে জানিয়ে দেয় যে তিনি স্বয়ংবরে উপস্থিত থাকবেন। স্বয়ংবর সভায় রাজকন্যা সংযুক্তা পৃথ্বীরাজের মূর্তির গলায় মালা দিলেন। আসলে পৃথ্বীরাজ ওই মুর্তির আড়ালেই লুকিয়ে ছিলেন।
এই ঘটনা দেখে উপস্থিত রাজারা হতবাক হয়ে যায়। পৃথ্বীরাজ চৌহান সংযুক্তাকে ঘোড়ায় উঠিয়ে স্বয়ংবর সভা ত্যাগ করলেন।
কনৌজ সেনারা তাদের ধাওয়া করল। মাঝপথে চাকোরী এসে পৃথ্বীরাজকে সাহায্য করল। কনৌজ থেকে নিরাপদে বেরিয়ে যাবার গোপন পথ দেখিয়ে দিল।
কিছু দূরেই চৌহান বাহিনী পৃথ্বীরাজের জন্য অপেক্ষা করছিল। চৌহান ও কনৌজ বাহিনীর তুমুল যুদ্ধ হলো।
জয়চাঁদের পরাজয় হয় এই যুদ্ধে। উভয় পক্ষেরই প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হল। এরপর দিল্লিতে এসে সনাতনী নিয়মে দুজনের বিয়ে হয়।
এরপর জয়চাঁদ ও পৃথ্বীরাজ চৌহানের মধ্যে প্রচণ্ড শত্রুতা হয়। পৃথ্বীরাজের ঘর আলো করলো কনৌজ রাজকন্যা সংযুক্তা। প্রেমের এই গল্পটা এভাবেই শেষ হতে পারত, অতঃপর তারা সুখে শান্তিতে ঘর করতে লাগলো! কিন্তু এটা সাধারন কোনো প্রেমকাহিনী নয়! তাই তো আবারও নাটকীয় এক মোড় নিল এই প্রেমের গল্প। এবার শ্বশুর জয়চাঁদ পরাজয় আর অপমানের বদলা নিতে হাত মেলালেন শত্রুপক্ষের সঙ্গে।
আগে তরাইনের প্রথম যুদ্ধে ১১৯১ সালে পরাজিত হয়ে আফগানিস্তানে ফিরে গিয়েছিলেন মুহাম্মদ ঘুরী। মুহাম্মদ্দ ঘুরী বেশ কয়েকবার চালুক্য রাজ্য আক্রমণ করেন, যা চৌহানদের সীমানায় ছিল। তবে বড় ধরনের অভিযান পরিচালনা শুরু করেন ১১৯০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে। গজনীর শাসনকর্তা মহম্মদ ঘোরি ১১৭৫ সালে সিন্ধু নদী পার হয়ে মুলতান দখল করেছিলেন এবং চৌহান রাজত্বের একেবারে পশ্চিম দিক দিয়ে সমস্ত মন্দির, দূর্গ ধ্বংস করে চলে গিয়েছিলেন।
মুহাম্মদ ঘুরীর প্রকৃত নাম ছিল, শিহাব-উদ-দীন ঘুরী। তবে শাসনভার গ্রহণ করার পর থেকে তিনি নিজেকে মুহাম্মদ ঘুরী বলে পরিচয় দিতেন।
মহম্মদ ঘোরির আক্রমণ রাজপুতদের কাছে ছিল রাহুর গ্রাসের মতো। পৃথ্বীরাজের পূর্বসুরিদের সময় থেকেই এই আক্রমণ চলে আসছিল।
পশ্চিম প্রদেশে পেশোয়ার, সিন্ধ, পাঞ্জাব প্রভৃতি দখল করে মহম্মদ ঘোরি নিজের শক্তিবৃদ্ধি করছিলেন। ১১৯০-৯১ সালে মহম্মদ ঘোরি চৌহান রাজ্য আক্রমণ করেন এবং ভাটিণ্ডা দূর্গ দখল করেন।
তাঁর মূল লক্ষ্য ছিল এই ভাটিণ্ডা দূর্গ দখল করে নিজের এলাকায় ফিরে যাওয়া। কিন্তু এই আক্রমণের সংবাদ পেয়ে বিশাল বাহিনী নিয়ে পৃথ্বীরাজ চৌহান ভাটিণ্ডার কাছে চলে আসেন।
তরাইনের প্রথম যুদ্ধে মহম্মদ ঘোরির সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করেন পৃথ্বীরাজ চৌহান।
যুদ্ধ শুরুর আগে, মোহাম্মদ ঘুরী তার প্রধান কাজী কিয়াম উল মুলক ইবনে রুকুনউদ্দিন কে দিয়ে পৃথ্বীরাজের কাছে পত্র পাঠান।
পত্র মারফত তিনি আহবান করেন পৃথ্বীরাজকে আত্মসমপর্ণ করে ঘুর সাম্রাজ্যের করদ রাজ্য হিসেবে স্থান নিতে। সেই সঙ্গে ঐ চিঠিতে পৃথ্বীরাজকে ইসলাম গ্রহণ করার জন্য বলেন।
স্বাভাবিকভাবেই পৃথ্বীরাজ এই চিঠি প্রত্যাখান করেন এবং যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন।
এর আগে, মোহাম্মদ ঘুরির সেনাবাহিনী চালুক্য রাজ্য যা বর্তমানে উত্তর রাজস্থান সেখানে একাধিক বার দখল অভিযান পরিচালনা করেন।
এই যুদ্ধে ঘুরীর সেনাবাহিনীকে মোকাবেলায় পৃথ্বীরাজ আশেপাশের আরো দুটি রাজপুত গোত্রের কাছে সাহায্য চান।
তারপর রাজপুতদের কয়েকটি গোত্রের সম্মিলিত বাহিনী মিলে তাদের সংখ্যা দাঁড়ায় ৫০,০০০। তাদের সাথে ছিল ৩০০ হাতি আর ১০০০ ঘোড়সাওয়ার সেনা।
রাজপুত সেনারা ছিল সম্মুখ যুদ্ধে পারদর্শী। অপরদিকে মুহাম্মদ ঘুরীর সেনাবাহিনী ছিল মূলত একদল ক্যাভিলারি নির্ভর বাহিনী। যারা দ্রুতগামী ঘোড়ায় চড়ে ঝটিকা আক্রমণ করতে দক্ষ।
একই সাথে তারা দ্রুতগামী ঘোড়ার উপর থেকে তীর মেরে হামলা চালানোর মাধ্যমে যুদ্ধ করতো। ১৫,০০০ সেনার মধ্যে অধিকাংশ সেনাই ছিল তীরন্দাজ নয়তো ঘোড় সাওয়ার।
যুদ্ধ শুরুর আগে, মুলতানের প্রচণ্ড গরম আর পাহাড়ি পথ বেয়ে আসতে ঘুরীর বাহিনীর ঘোড়াগুলো ক্লান্ত হয়ে যায়।
তারা ত্বরাইনের প্রান্তরে পৌছায়, অপরপ্রান্তে চৌহান সেনারা ঘাঁটি গেড়ে বসেছিল। মুহাম্মদ ঘুরী তার সেনাদের নয়টি দলে ভাগ করেন।
মাঝখানে ছিল তার ভ্যানগার্ড আর দুইপাশে ছিল দুটি উইং। রাজপুত সেনাদের রণকৌশল সম্পর্কে ঘুরীর কোন ধারণাই ছিল না।
তিনি প্রথমেই তার একদল তীরন্দাজ পাঠিয়ে রাজপুতদের আক্রমণ করার নির্দেশ দেন। দ্রুতগামী তীরন্দাজদের আক্রমণে শুরুতেই কিছু সেনা হারিয়ে ফেলে রাজপুত বাহিনী।
তবে এখানে মুহাম্মদ ঘুরী কিছু ভুল করেন। ত্বরাইনের প্রান্তর ঘোড় সাওয়ার বাহিনী বারবার মুভ করে আক্রমণ চালানোর জন্য অনুপযুক্ত ছিল। সরু জায়গা ছিল এটি।
একই বিষয় পৃথ্বীরাজও বুঝতে পারেন। তিনি দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে নির্দেশ দেন। আর তার আদেশে ক্ষিপ্র গতিতে ঘুরী সেনাদের আক্রমণ করে বসে রাজপুত সেনারা।
ঘুরীর সেনারা দ্রুত সেই আক্রমণ প্রতিহত করে ফেলে। কিন্তু চৌহান সেনাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা তাদের জন্য বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ক্রমেই তারা শক্তিক্ষীণ হতে থাকে। আর পেছনে যেতে থাকে ঘুরীর সেনাবাহিনী। এই সময় মোহাম্মদ ঘুরী নিজে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। সেনাদের মনোবল বাড়াতে তিনি রাজপুত লাইনের কেন্দ্রে থাকা তাদের প্রধান সেনাপতি পৃথ্বীরাজ চৌহানের ভাই জয় গোবিন্দের উপর হামলা চালান।
জয় গোবিন্দ হাতির পিঠে থাকা অবস্থায় মাথায় প্রচন্ড আঘাত পান। সেই সময় এক রাজপুত সেনার বর্শার আঘাতে গুরতর আহত হন ঘুরী। তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।
তার দেহরক্ষী এক সেনা উপস্থিত বুদ্ধি খাটিয়ে তাকে ঘোড়ার পিঠে করে নিয়ে যায়। মুহাম্মদ ঘুরী পালিয়ে যেতেই ঘুরী সেনারা ছত্রভঙ্গ হতে শুরু করে।
তারা যেই পথে এসেছিল সেই পথ ধরেই পালাতে শুরু করে। পৃথ্বীরাজ চৌহান প্রায় ৪০ কিলোমিটার রাস্তা তাদের তাড়া করেন।
কিন্তু পাথুরে রাস্তায় তাড়া করার মত বাহিনী তাদের ছিল না। কারণ ঘুরীর সেনাদের ঘোড়াগুলো মধ্য এশিয়ার রুক্ষ প্রান্তরে চলতে অভ্যস্ত। তাই, তারা দ্রুত পালাতে পেরেছিল।
এই যুদ্ধে মোহাম্মদ ঘুরী গুরুতর আহত হওয়া সত্ত্বেও বেঁচে যায়।
সুতরাং বলা যায় এই যুদ্ধে মোহাম্মদ ঘুরীর খুব বড় পরাজয় হয়েছিল। মহম্মদ ঘোরি ও পৃথ্বীরাজ চৌহানের মধ্যে এই যুদ্ধ হয় সিরহিন্দ নামক স্থানে তারাইন নামক এলাকায়। এজন্য একে তরাইনের প্রথম যুদ্ধও বলা হয়।
ভাটিণ্ডা দূর্গের অধিকার পুনরায় ফিরে পান পৃথ্বীরাজ চৌহান। পৃথ্বীরাজ চৌহান এই যুদ্ধে প্রায় ৭ কোটিরও বেশি মূল্যের সম্পত্তি অর্জন করেছিলেন, যার কিছু তিনি নিজের কাছে রেখেছিলেন এবং বাকিগুলি তার সৈন্যদের মধ্যে বিতরণ করেছিলেন। এই যুদ্ধের ফলে প্রথমে ভারতে ঘুরীদের প্রবেশ ব্যার্থ হয়ে যায়।
বহু ঐতিহাসিক প্রাপ্ত তথ্য ও শিলালিপি বিশ্লেষণ করে এটা বলেছেন যে, অটোমান আক্রমণকারী মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন ঘুরীর মধ্যে প্রায় 17 বার যুদ্ধ হয়েছিল পৃথ্বীরাজের সঙ্গে এবং পৃথ্বীরাজ চৌহান সমস্ত যুদ্ধে মোহাম্মদ ঘোরিকে পরাজিত করেছিলেন।
পৃথ্বীরাজ চৌহান নিজের সাম্রাজ্য বিস্তার করেছিলেন ঠিকই, কিন্তু ইতিহাসে মহম্মদ ঘোরির সঙ্গে তাঁর যুদ্ধের কথাই বেশি গুরুত্বপূর্ণভাবে আলোচিত হয়েছে।
এই পরাজয়ের প্রতিশোধ নেয়ার অদম্য ইচ্ছা ঘুড়ীর মনে জাগ্রত হয়। সেই প্রতিশোধের আগুনে ঘি ঢেলে দিলেন পৃথ্বীরাজের শ্বশুর জয়চাঁদ।
তিনি ঘুরীকে দিল্লি দখল করার আহ্বান জানালেন। সঙ্গে দিলেন সহায়তার পরিপূর্ণ আশ্বাস।
এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে মুহাম্মদ ঘুরী পুনরায় ভারতবর্ষ আক্রমণ করেন।
মোহাম্মদ ঘুড়ী নিজেকে পুনরায় প্রস্তুত করেন। এক লক্ষ কুড়ি হাজার আফগান ও তুর্কী অশ্বারোহী নিয়ে নিজের বিশাল সেনাবাহিনী তৈরি করেন।
মোহাম্মদ ঘুরীর ভারত আক্রমণের সংবাদ শুনে অন্তঃপুর ছেড়ে আবারো পৃথ্বীরাজকে আসতে হলো যুদ্ধের ময়দানে। দেশপ্রেমিক রাজা পৃথ্বীরাজ চৌহান তার অধীন সব রাজ্যের রাজাকে আহ্বান জানালেন তাকে সহায়তা করতে।
কিন্তু পৃথ্বীরাজের শ্বশুর জয়চাঁদ আগেই সবাইকে সহায়তা করা থেকে বিরত থাকতে রাজি করিয়ে ফেলেছিল। ফলে একা নিজের স্বল্প বাহিনী নিয়েই তরাইনের যুদ্ধের ময়দানে আসতে হলো বীর যোদ্ধা পৃথ্বীরাজকে।
তবুও তিন লক্ষ ঘোড়া ও তিন হাজার হাতি এবং পদাতিক বাহিনী নিয়ে পৃথ্বীরাজ চৌহান মোহাম্মদ ঘোরির আক্রমণ প্রতিহত করতে যান।
সামরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ায় মহম্মদ ঘোরির আক্রমণ তিনি প্রতিহত করতে পারেননি।
এবার আর তিনি পারলেন না প্রাণপণ চেষ্টা করেও! এই যুদ্ধে মহম্মদ ঘোরির বিশেষ রণকৌশলের কারণে চৌহানদের এক লক্ষ সৈন্যের মৃত্যু হয় এবং অবশেষে পৃথ্বীরাজ চৌহান পরাজিত হন।
অনান্য রাজপুত রাজাদের অসহযোগীতার কারণে তরাইনের এই যুদ্ধে পরাজয় বরণ করতে হয় রাজা পৃথ্বীরাজকে।
শ্বশুরের খলনায়কোচিত ভূমিকার কারণে এভাবেই করুণ এক ট্র্যাজেডিতে পরিণত হয় অসামান্য একটি প্রেমকাহিনী।
এই যুদ্ধে মোহাম্মদ ঘোরি পৃথ্বীরাজ চৌহানকে পরাজিত এবং বন্দী করেন। বন্দী অবস্থায় বহু নির্মম নির্যাতন ভোগ করতে হয় পৃথ্বীরাজকে। দুচোখ অন্ধ করে দেওয়া হয়।
হিংস্র বণ্য প্রাণীর সামনে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন ঘোরিকে পৃথ্বীরাজ চৌহান দরবারের মধ্যে শব্দভেদী বানের সাহায্যে বধ করে।
তারপর মোহাম্মদ ঘোরীর সৈন্যরা পৃথ্বীরাজ চৌহান এবং তার বাল্য বন্ধু চন্দ্রবর্দাইকে ঘেরাও করতে থাকে।
এইভাবে তুর্কিদের হাতে মারা যাওয়ার চেয়ে নিজেরাই মৃত্যু বরণ করা ভাল, এজন্য তারা উভয়েই সিদ্ধান্ত নিল, তারা নিজেরাই তাদের জীবন শেষ করবে।
এরপর দুজনেই খঞ্জর/ ছুড়ি বের করে একে অপরের পেটে ঢুকিয়ে দিয়ে আঘাত করে এবং এভাবে অল্প সময়ের মধ্যে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে দুজনের মৃত্যু হয়।
ঐতিহাসিক দের মতে পৃথ্বীরাজের মৃত্যুর সাল ছিল ১১৯২।
অপরদিকে, মহারাণী সংযুক্তা যখন পৃথ্বীরাজ চৌহান এবং চন্দ্র বারদাইয়ের মৃত্যুর খবর জানতে পারেন, তখন তিনিও অন্তঃপুরে আত্মাহুতি দেন।
পৃথ্বীরাজ ছিলেন শেষ রাজপুত হিন্দু রাজা যিনি দিল্লি শাসন করেছিলেন।
তরাইনের এই যুদ্ধে তার পরাজয়ের মাধ্যমেই দিল্লিতে মুসলিম শাসন শুরু হয়।
বিজয়ী বীর মুহাম্মদ ঘুরী দিল্লিতে সালতানাত প্রতিষ্ঠা করেন।
ইতিহাসের নিষ্পৃহ শীতল দৃষ্টিতে এটা হয়তো রাজা পৃথ্বীরাজ চৌহানের পরিচয়।
কিন্তু স্বাধীনচেতা, রাজপুত রাজা, বীর যোদ্ধা, শেষ হিন্দু সম্রাট, করুণ মৃত্যু- এসব ছাড়াও পৃথ্বীরাজের রয়েছে ইতিহাসে আরেকটি বড় পরিচয়।
আর সেই পরিচয়টি শুধু ইতিহাসের পাতায় না, কাব্য গ্রন্থেও পাওয়া যায়। আর সেই পৃথ্বীরাজ চৌহান কোনো যোদ্ধা না, কোনো রাজা-মহারাজা না, তিনি শুধুই একজন প্রেমিক, যার প্রেমকাহিনী আজও লোককথার অংশ হয়ে মানুষের মুখে মুখে ভারতবর্ষের বহু অঞ্চলে!
প্রায় এক হাজার বছর হয়ে গেলেও ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চলে এখনো গ্রামীণ রূপকথা এবং লোককথায় এই প্রেমকাহিনী, বিশেষ করে স্বয়ংবর সভা থেকে সংযুক্তাকে ছিনিয়ে আনার ঘটনাটি বেশ আলোচিত।
পৃথ্বীরাজের জীবনকে কেন্দ্র করে মধ্যযুগ থেকে রচিত হয়েছে বহু কাব্য, বহু গ্রন্থ। শিলালিপিতেও পাওয়া গেছে তাঁর জীবনের বহু কথা।
বর্তমান কালেও বহু চলচ্চিত্র, নাটক, উপন্যাসের মুখ চরিত্র হয়ে উঠেছেন রাজপুত রাজা পৃথ্বীরাজ চৌহান।
ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে রাজা পৃথ্বীরাজ চৌহান ছিল এক অনন্য নাম।
Pingback: সৌদি আরবের সৌদি আরবের মসজিদে জঙ্গিদের সহিংস হামলা! - Shivrupi
Pingback: পেশোয়া বাজিরাও ভারতবর্ষের এক মহান যোদ্ধা! Bajirao Family - Shivrupi
Pingback: ভারতবর্ষে মোঘল সাম্রাজ্যের শাসন এর ইতিহাস | Shivrupi
Pingback: প্রথম অস্ত্রোপচারের জনক মহর্ষি সুশ্রুত |
Pingback: মুঘলদের কট্টর শত্রু ছিলেন বাপ্পা রাওয়াল |
Pingback: সেন বংশের শেষ শাসক রাজা লক্ষ্মণ সেন
Pingback: সেন বংশের শেষ শাসক রাজা লক্ষ্মণ সেন এর শাসন আমল ও ইতিহাস