গোয়ালিয়র দূর্গ | জিব্রাল্টার অফ ইন্ডিয়া
অসাধারণ প্রাচীনতম একটা সনাতনী স্থাপত্য! ভারতের মধ্যপ্রদেশের অবস্থিত গোয়ালিয়র দুর্গ। গোয়ালিয়র শহরের গোপাঞ্চাল নামক একটি ছোট পাহাড়ের উপর অবস্থিত এই দুর্গটি। এই ঐতিহাসিক নিদর্শনটি ৮ম শতাব্দীতে নির্মিত হয়েছিল। এই দুর্গের উচ্চতা প্রায় ৩৫০ ফুট। (মধ্যপ্রদেশের দর্শনীয় স্থান)
মধ্যপ্রদেশের এই ঐতিহাসিক দুর্গকে ‘জিব্রাল্টার অফ ইন্ডিয়া’ বলা হয়।
গোয়ালিয়র দূর্গ জয় করেন কে?
অষ্টম শতাব্দীতে নির্মিত এই দুর্গটি ভারতের অন্যতম বৃহত্তম দুর্গ হিসাবে বিবেচিত হয়। এই দুর্গটি সূর্যসেন নামে একজন স্থানীয় সর্দার দ্বারা নির্মাণ করেছিলেন। তবে বহু ঐতিহাসিকবিদ এও দাবি জানান যে এই দুর্গটি থেকে বহু বছর ধরে পাল রাজবংশ, মুঘল রাজবংশ/ ভীম সিং, মহারাজা দেবরাম প্রভৃতি রাজ্য শাসন করেছিল।
তবে, মোঘল সাম্রাজ্যের স্থপতি বাবরের মতে হিন্দুস্থানের উজ্জ্বল রত্ন গোয়ালিয়র দূর্গ!
গোয়ালিয়র রাজ্য
গোয়ালিয়র দুর্গটি তিন বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। দুর্গের কাঠামোটি সুন্দর লাল পাথর দিয়ে তৈরি দুর্গের স্থাপত্য খুব সুন্দর, দুর্গের দেয়ালগুলি সুন্দর নকশা এবং শিলালিপি দিয়ে সজ্জিত।
গোয়ালিয়র দুর্গের অভ্যন্তরে অনেক ঐতিহাসিক নিদর্শন রয়েছে। রয়েছে সনাতনীৃ মন্দির, বুদ্ধ-জৈন মন্দির, গুজারি মহল, মানসিংহ মহল, ব্রিটিশ আমলের স্মৃতিস্তম্ব, জয় বিলাস প্রাসাদ, ঝাঁসির রানি স্মৃতিস্তম্ভ, বিড়লা সূর্য মন্দির…
গোয়ালিয়র দুর্গের অভ্যন্তরে একটি পুকুর রয়েছে।
কথিত আছে, রাজা সুরজ সেন কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত হবার পরে তৎকালীন এক বিখ্যাত গৃবালিপা মতান্তরে গওয়ালিপা ঋষি এই পুকুরের জল দিয়েই রাজাকে সুস্থ করে।
পরে রাজা ঐ ঋষিকে সন্মানিত করতেই এই দূর্গ নির্মাণ করে!
এখনো সেখানকার স্থানীয় মানুষের ধারণা এই পুকুরের জল পান করলে নাকি দুরারোগ্য নিরাময় হয়ে যায়। একই ভাবে মানুষের ধারণা রয়েছে যে এই দুর্গের মধ্যে নাকি লুকিয়ে রয়েছে বহু ধন সম্পত্তি। যদি এর হদিস আজ অবধি কোনও ঐতিহাসিক বিদ দেননি।
এটি মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের উত্তর অংশে অবস্থিত একটি অন্যতম প্রধান শহর। এটি ভারতের রাজধানী দিল্লি থেকে 343 কিলোমিটার দক্ষিণে, ও আগ্রা থেকে 120 কিলোমিটার এবং রাজ্যের রাজধানী ভোপাল থেকে 414 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। গোয়ালিয়র ভারতের একটি ঐতিহাসিক শহর এবং এর দুর্গটা উত্তর ভারতীয় রাজ্যের কয়েকটি ঐতিহাসিক শাসক দ্বারা শাসিত হয়েছে। 10 শতকে কচ্ছপাঘাটা থেকে, 13 শতকে তোমরদের কাছ থেকে, পরে মুঘল সাম্রাজ্যের অধীনে তারপর 1754 সালে মারাঠাদের অধীনে ছিল।
গোয়ালিয়র ছিল মধ্য ভারত রাজ্যের শীতকালীন রাজধানী যা পরে মধ্যপ্রদেশের বৃহত্তর রাজ্যের একটি অংশ হয়ে ওঠে। 15 আগস্ট 1947 এ ভারতের স্বাধীনতার আগে, গোয়ালিয়র স্থানীয় শাসক হিসাবে সিন্ধিয়াদের সাথে ব্রিটিশ রাজের একটি রাজকীয় রাজ্য ছিল। উঁচু পাহাড় শহরটিকে চারদিক থেকে ঘিরে রেখেছে। শহরটি পাহাড়ের মাঝখানে এক উপত্যকায় অবস্থিত।
1857 সালের বিদ্রোহের সময় গোয়ালিয়র ছিল বিদ্রোহের অন্যতম প্রধান স্থান। স্বাধীনতা পরবর্তী গোয়ালিয়র মধ্য ভারতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। বর্তমানে এটি এখন একটি প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরে পরিণত হয়েছে।
গোয়ালিয়রকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ফ্ল্যাগশিপ স্মার্ট সিটি মিশনের অধীনে একটি স্মার্ট শহর হিসাবে গড়ে তোলার জন্য শতাধিক ভারতীয় শহরের মধ্যে একটি হিসাবে নির্বাচিত করা হয়েছে।
Pingback: মহারানা প্রতাপ সিংহ Maharana Pratap Singh - Shivrupi
Pingback: প্রথম অস্ত্রোপচারের জনক মহর্ষি সুশ্রুত
Pingback: ভারতের নেপোলিয়ন সম্রাট সুমদ্রগুপ্ত | গুপ্ত সাম্রাজ্যের শ্রেষ্ঠ শাসক সম্রাট সুমদ্রগুপ্ত
Pingback: তাজমহল | তেজ মহালয় থেকে তাজমহলের ইতিহাস | আগ্রার তাজমহল সম্পর্কে অজানা তথ্য